রাজনীতি
গাজীপুরের কালীগঞ্জে জামায়াতের ইফতার মাহফিলে বিএনপির হামলা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত ইফতার মাহফিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে আটটার দিকে বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য খলাপাড়া খাজা মার্কেট এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। বিএনপি কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।হামলায় গুরুতর ৫ জন আহত হয়েছে। থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এখনো কোন আসামী গ্রেফতার করেনি।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত ইফতার মাহফিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে আটটার দিকে বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য খলাপাড়া খাজা মার্কেট এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। বিএনপি কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।হামলায় গুরুতর ৫ জন আহত হয়েছে। থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এখনো কোন আসামী গ্রেফতার করেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল চলাকালে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দেন, যা নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিএনপি কর্মীরা ইফতার সামগ্রী ফেলে দেন এবং জামায়াত কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এতে জামায়াতের অন্তত পাঁচজন কর্মী গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে আসলাম (২৬) ও হাফিজ উদ্দিন (৩৫)কে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়, বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ
জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করেছে। তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে, বাহাদুরসাদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, "এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিএনপির কিছু কর্মী এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।"
পুলিশের বক্তব্য
কালীগঞ্জ থানার ওসি জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাকসুদুল কবীর নকিব বলেন, "এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। তবে আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে, আশা করছি ১-২ দিনের মধ্যে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে।"
হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
এই হামলার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার উদ্যোগে বাহাদুরসাদী এলাকায় এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে বিপুল সংখ্যক কর্মী ও সমর্থক অংশ নেন। মিছিলটি কালীগঞ্জ সদর হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সোনালী ব্যাংকের মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভকারীরা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, "এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।" তারা প্রশাসনের কাছে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দের নিন্দাঃ এছাড়া, গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর ড. জাহাঙ্গীর আলম ও সেক্রেটারি মো. সফি উদ্দিন, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ও সেক্রেটারি আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুকসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একই সঙ্গে তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মো. খায়রুল হাসান। তিনি বলেন, "৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে কোনো হানাহানি বা সংঘাত থাকবে না। সকল প্রকার জুলুম ও বৈষম্যের অবসান ঘটবে—এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পথে হাঁটছে। মনে রাখবেন, এই পথ অন্ধকারের পথ, ধ্বংসের পথ। ফ্যাসিবাদের পথে হাঁটলে ৫ আগস্টের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "রোজাদার জামায়াত কর্মীদের ওপর কাপুরুষোচিত হামলা ন্যাক্কারজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।"
উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও আইন বিষয়ক সম্পাদক মাস্টার মোখলেছুর রহমান, উপজেলা নায়েবে আমীর মো. আফতাব উদ্দিন, মাওলানা বদিউজ্জামাল, পৌরসভা আমীর মাওলানা আমিমুল এহসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ মিছিলে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও ছাত্রজনতা অংশগ্রহণ করেন এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।