বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল কখনোই ৪৯% এর বেশি ভোট পায়নি, তবুও সংসদে গিয়ে তারা দাবি করে যে, আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাকি ৫১% মানুষের ভোট কোথায় প্রতিফলিত হচ্ছে? যারা তাদের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, তাদের মতামত কি অপ্রাসঙ্গিক?
হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসুবক পোস্ট হুবুহু তুলে ধরা হলো............
বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার ভয়াবহতা
▪️ বাস্তবতা হলো— মাত্র ৪০-৪৯% ভোট নিয়েই একটি দল সংসদে গিয়ে—
• নতুন আইন প্রণয়ন করে,
• সংবিধান পরিবর্তন করে,
• রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এরচেয়ে অগণতান্ত্রিক, অবিচারপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
⸻
কেন PR (Proportional Representation) প্রয়োজন?
১️⃣ গণতন্ত্রের মূলনীতি হলো— জনগণের প্রতিটি মতামতকে সমান গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু বর্তমান ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (FPTP) ব্যবস্থায় ৫১% মানুষের ভোট কার্যত ডাস্টবিনে চলে যায়। PR এই সমস্যার সমাধান করে।
২️⃣ উন্নত বিশ্বে PR এর সফলতা: জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া— প্রায় সব উন্নত গণতন্ত্রেই PR বা মিশ্র ব্যবস্থা চালু আছে। ফলে—
• কোনো দল এককভাবে ক্ষমতার দখলদার হতে পারে না,
• ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হয়,
• জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
৩️⃣ বাংলাদেশে অভিজ্ঞতা: ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে— এক দল ক্ষমতায় এলেই তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
👉 এই রাজনৈতিক একচ্ছত্রতা ভাঙতে হলে PR ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
⸻
যারা PR এর বিরোধিতা করে, তারা কী চায়?
🔻 তারা বলে— “PR আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত নয়।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো— কোন দেশে PR একদিনে উপযুক্ত হয়ে গিয়েছিল?
➡️ সব দেশেই ধীরে ধীরে রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে PR চালু হয়েছে, এবং সময়ের সাথে তা পরিপক্ক হয়েছে।
🔻 তারা বলে— “PR আনলে অস্থিতিশীলতা হবে।”
➡️ বাস্তবতা হলো, অস্থিতিশীলতা হচ্ছে একদলীয় দখলদারিত্বের কারণে।
➡️ PR চালু হলে ক্ষমতা ভাগাভাগি হবে, আর কোনো দল ইচ্ছেমতো সংবিধান ও আইন নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারবে না।
📌 সত্য হলো— যারা PR এর বিপক্ষে, তারা আসলে ৪০%-এর একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। তারা গণতন্ত্র নয়, ক্ষমতার একচেটিয়া রাজনীতি রক্ষা করছে।
⸻
সম্ভাব্য সংস্কার: উচ্চকক্ষ (Upper House)
বর্তমান নিম্নকক্ষে হয়তো সরাসরি PR চালু করা কঠিন হতে পারে। তবে—
✅ একটি উচ্চকক্ষ (Upper House) গঠন করে সেখানে PR ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যেতে পারে।
✅ সংরক্ষিত আসনগুলোতেও PR চালু করা সম্ভব।
এর ফলে—
• জনগণ তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে,
• যারা হেরে যাবে তাদের ভোটও নষ্ট হবে না,
• রাষ্ট্রের নীতি, আইন, সংবিধান সংশোধন— সবকিছুতে সবার মতামত প্রতিফলিত হবে।
⸻
উচ্চকক্ষের মূল দায়িত্ব
• সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন
• আইন প্রণয়ন ও সংশোধন
• সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ
👉 এসব ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
অন্যথায়, যত সংস্কারই হোক না কেন, আবারও একটি দলের হাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে।
ফলে গণতন্ত্র নয়, বরং একদলীয় স্বৈরতন্ত্রই বারবার ফিরে আসবে।
⸻
উপসংহার
বাংলাদেশের জনগণ বারবার দেখেছে— মাত্র ৪০% ভোট পেয়ে কোনো দল ১০০% ক্ষমতা ভোগ করে, আর ৫১% মানুষের ভোট ডাস্টবিনে চলে যায়।
এটি গণতন্ত্র নয়, একদলীয় স্বৈরতন্ত্রের মুখোশ।
👉 এখন সময় এসেছে প্রতিটি ভোটের সঠিক মূল্যায়ন করার।
👉 PR ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয়।
✊ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
✊ ইনকিলাব জিন্দাবাদ