বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, যারা বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না তারাই পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে জনগণের ভোটের সঠিক মূল্যায়ন হবে, নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধ হবে। কালো টাকার প্রভাব, কেন্দ্র দখল বন্ধ হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ৩৬ জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে ফ্যাসিস্টকে বিদায় করলেও বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে আবারো কালো মেঘের ঘনঘটার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষা ও নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া না হলে ফ্যাসিবাদের পথ উন্মুক্ত থাকবে। নতুন করে সংসদীয় গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের জন্ম নেবে। বাংলাদেশে নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান সাধারণ জনগণ মেনে নিবে না। গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর খালিশপুর থানাধীন বৈকালী এলাকায় গণসংযোগ শেষে বৈকালী বাজারে পথসভায় তিনি এ সব কথা বলেন। স্থানীয় দোকানপাট, গলি, মহল্লা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা-বোন ও তরুণ ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এসময় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ দাঁড়িপাল্লার প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানান এবং নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় অংশগ্রহণের আশ্বাস দেন।
৯ নং ওয়ার্ড আমীর কাজী বায়েজিদের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাওলানা শহিদুল্লাহ'র সঞ্চালনায় পথসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, সমাজ কল্যাণ সেক্রেটারি অধ্যাপক ইকবাল হুসাইন, খালিশপুর থানা সেক্রেটারি মু. আব্দুল আউয়াল, থানা রাজনৈতিক সেক্রেটারি মন্তাজুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বৈকালি বাজারের ব্যবসায়ী ও বণিক সমিতি নেতা আবু তাহের, আমীর হোসেন, শেখ জালাল হোসেন, জয়নাল হোসেন, শেখ হায়দার আলী, কাজী ওয়াহিদুল ইসলাম, জামায়াত নেতা শেখ হোসেন আলী, লিমন হোসেন, শ্রমিক নেতা শামীম হোসেন, জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মহানগরী আমীর বলেন, জনগণের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন, মানুষ কি চায়। মানুষ নির্দ্বিধায়, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারলে এই জাতি কাউকে ক্ষমা করবে না। তাই বর্তমান সরকারকে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, যারা কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা এখনো বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তাদের সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করতে প্রয়োজনে ছাত্র-জনতা আবারও রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, খুলনার মানুষ উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছ প্রশাসন চায়। আমরা এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ গড়তে চাই যেখানে ভোট কেন্দ্র হবে নিরাপদ, ফলাফল হবে বিশ্বাসযোগ্য এবং জনগণের রায় হবে সর্বোচ্চ।
তিনি আরও বলেন, যুবসমাজ, নারী ও প্রথমবারের ভোটারদেরকে সচেতন করা এবং ভোটের দিন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত তথ্য-সহায়তা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল, যার উদ্দেশ্য শুধু রাজনৈতিক অর্জন নয়, বরং ইসলামী হুকুমতের মাধ্যমে সমাজে ন্যায্যতা, সততা এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিবর্তন আনা। যারা শুধুমাত্র দুনিয়াবী স্বার্থে এই দলে আসেন, তাদের জন্য এটি সঠিক জায়গা নয়। সমাজ থেকে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি এবং নারী নির্যাতনের মতো সামাজিক ব্যাধি দূর করাই এ দলের অন্যতম লক্ষ্য।