ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্র শিবিরের বিজয় কোনো মাস্টার প্ল্যানের অংশ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, যেদিন ভোট সেদিন ভোটার তৈরি করা হচ্ছে এবং হাতে লিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, এগুলো কী অনিয়ম নয়? ব্যালট পেপার, ব্যালট বই ছাপানো হবে, সেটা একটি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে কেনো? ঠিক একই কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে। তাহলে রাষ্ট্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব মিলিয়ে কোনো একটা গভীর নীল নকশা তৈরির হচ্ছে কিনা-সেটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন।

রিজভী বলেন, আমরা যেটা দেখছি, সেটা গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক, গণতন্ত্রের চর্চার জন্যও বিপদজনক এবং মানুষের যে ধর্মীয় চেতনা এটা জন্যও বিপজ্জনক। এখানে মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন আবার এসে টেলিভিশনে নাটকও দেখেন, গানও শুনেন। কিন্তু আপনি যখন এক পাক্ষিক করে ফেলবেন সমাজ একটা আরেকটা নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদের রুপ নেবে।

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কাকরাইলের আইডিবি মিলনায়তনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৮তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ডাকসু-জাকসুতে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, কেউ কেউ মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের ফলাফল হয়েছে। গণতন্ত্রে সাধারণ ছাত্র সমাজের ইচ্ছার প্রতিফলন তার বিরুদ্ধাচারণ করি না। কিন্তু এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য যদি কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং হয় এটা কিন্তু ধরা পড়বে। যেটা আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে।

রিজভী বলেন, ওদের ান্ডামি দেখেন। যারা ছাত্রলীগের নেতা সেজে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছেন, হেলমেট পড়ে গণতন্ত্রের কর্মী, ছাত্র দলসহ অন্যান্য দলের কর্মীদের আঘাত করেছেন আবার শেখ হাসিনার পতনের পর আসল রুপ নিয়ে যারা ছাত্রশিবির হয়ে গেলেন -এই যে ঘটনা এটা আজকে জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত গোপনে তারা প্রচার চালায় যে বিএনপি চাঁদাবাজি-টাদাবাজির সাথে যুক্ত। বিএনপি বৃহত্তর দল.. কেউ না কেউ দুষ্ট চক্র থাকতে পারে, এই চক্র নানা ধরনের কাজ করতে পারে। দল যদি এটা নীরবে সহ্য করে যায় তাহলে সেটা দলের দোষ। আর দল যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তাহলে দল সঠিক পথে আছে। একটা পরিবারের একজন সন্তান বিপদগামী হতে পারে কিন্তু তাকে সোজা করার জন্য শাস্তি দেয়ার জন্য ওই পরিবার ব্যবস্থা নিলে সেই পরিবার সঠিক কাজটি করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের কিছু গণমাধ্যমে ওদের সাথে মিলে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যায় সব সময়।

রিজভী বলেন, যে ছাত্র সংগঠনটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তাদের খুব জনপ্রিয়তা তারা ইয়ে হচ্ছেন। কিন্তু আমি আতঙ্কিত বোধ করি। এদের যে রাজনৈতিক দলটি এরা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করল। আমরা যখন দেখছি, এই অঞ্চলের মানুষ পশ্চিমাদের দ্বারা বঞ্চিত সমস্ত দিক থেকে শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনীতিসহ সমস্ত দিক থেকে তখন এটা মুক্তিযুদ্ধে টার্ন নিলো, জামায়াত তখন বিরোধিতা করল। তারপরে যখন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তারা রাজনীতি করার সুযোগ পেলো। তারপরে এরা যতগুলো ঘটনা হয়েছে জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে এক সাথে কাজ করেছে, এটা আপনাদের সবার মনে থাকার কথা।

রিজভী বলেন, এখন আমরা খবর পাই, বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় ওই সমস্ত নিপীড়নকারী, নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগারদের জামায়াতের সদস্য করা হচ্ছে। এর প্রমাণ আছে, ডকুমেন্ট আছে সামাজিক মাধ্যমে সব প্রকাশ হচ্ছে। আমি বলি আপনাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসররা যাদের বিভিন্ন জায়গায় ছবি আছে, অতীত কর্মকান্ড আছে তারা যেন আপনাদের এই সংগঠনে ঢুকতে না পারে এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ(ডিইএব) এর আহ্বায়ক মো. হানিফ ও সদস্য সচিব কাজী শাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি সাইফুল আলম নিরবসহ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ বক্তব্য রাখেন।