রমজান আলী, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে চিরিরবন্দর-খানসামার ভোটের মাঠ। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় আন্দোলনের মুখে আওয়ামী দুঃশাসনের পতনের পর চিরিরবন্দর-খানসামার রাজনৈতিক চিত্র বদলে গেছে। অতীতে চার দলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিদন্দ্বিতা হলেও এবার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চমক দেখাতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াত নেতাদের মতে জনগণের আস্থা, তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি ও প্রার্থীর অতীত সুনামের ভিত্তিতে দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) এ আসনে এবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জয়ের আশা করছে।
প্রধান দুই দলের বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে এর কিছু সাংগঠনিক উপস্থিতি থাকলেও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাংগঠনিক কোন তাৎপরতা চোখে পড়ে না। বাম রাজনীতির দৃশ্যমান কোন প্রভাব নাই। অন্যান্য পার্টির কোন রাজনৈতিক তৎপরতাও দৃশ্যমান নাই। জামায়াত-বিএনপি সরাসরি লড়াই হবে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। সম্ভাব্য প্রার্থীগণ নির্বাচনী এলাকায় এখন গণসংযোগ, জানাজা, হিন্দুদের হরিবাসরসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আগেই ঘোষণা করেছে । উপজেলা পরিষদের দুই বারের সফল সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াতের সাবেক জেলা আমির আফতাব উদ্দীন মোল্লা। তিনি সামাজিক উন্নয়নমূলক অনেক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তিনি ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে একাধিকবার গ্রেফতার হন। ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে চিরিরবন্দর খানসামার উপজেলায় জনগণের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। তার গণসংযোগ কাজ জোরে-সোরে চলছে। চলছে পথসভা মতবিনিময় উঠান বৈঠক কর্মী সভা ও চিকিৎসা সেবাসহ বিশুদ্ধ পানির জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান করে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিনাজপুর-৪ চিরিরবন্দর খানসামার সর্বোস্তরের ভোটারেরা তার ব্যাপারে এবার অনেক আশাবাদী।
দিনাজপুর-৪ আসনে বিএনপির একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে মাঠে কাজ করছেন। তারা এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এদের মধ্যে সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান মিয়া ও খানসামা উপজেলার কর্ণেল মোস্তাফিজুর রহমান (অব:) ও সাবেক এমপি এডভোকেট আব্দুল হালিম।
আখতারুজ্জামান মিয়ার রাজনীতিতে উত্থান ২০০১ সালের ৪ দলীয় জোটের বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনি চিরিরবন্দর খানসামা আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে তিনি চিরিরবন্দর খানসামায় বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ করা সহ দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। সেই সাথে চালাচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড। আগামী সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়নের বিষয়ে তাকে মূল্যায়ন করবে বলে তার বিশ্বাস।
অপর দিকে বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কর্নেল অবসর প্রাপ্ত মোস্তাফিজুর রহমান সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর কি করেছেন তা জানা না গেলেও ২৪ এর গণঅভ্যূত্থানের পর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে চিরিরবন্দর খানসামায় দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন। সেই মর্মে গণসংযোগ সহ টুকটাক দলীয় কার্যক্রম বিচ্ছিন্নভাবে চালাচ্ছেন। অবসর প্রাপ্ত কর্নেলের অনুসারীরা মনে করছেন তিনি সম্প্রতি লন্ডন সফর থেকে ফিরে শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করে এলাকায় প্রচার কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছেন। দলীয় হাই কমান্ড দিনাজপুর-৪ এর বিএনপি মনোনয়নের বিষয়ে নতুন মুখের বিবেচনা করবেন বলে তাদের প্রত্যাশা। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি আব্দুল হালিম দীর্ঘদিন সুখে দুখে বিএনপির বিভিন্ন কার্যকর্মের সাথে সংযুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে চিরিরবন্দর খানসামায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য গণসংযোগ চালাচ্ছে।