গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে সরব হয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। জেলার মোট পাঁচটি আসনে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এবারের নির্বাচনে ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে অতীতের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় ভোটের মাঠে তাদের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি। তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। নির্বাচনের মাঠে তারা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তার দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গীরাও আতঙ্কে। তাদের ভোটের মাঠে নামার এখনো কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়েনি। বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গী জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ মহাজোটের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও তাদের ভোট নিয়ে কোনো তৎপরতা নেই। এ দলগুলোর অনেকে বিএনপি-জামায়াতে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) স্বৈরাচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের শরিকদের কেউ ভোটের মাঠে নেই। এ কারণে দীর্ঘদিনের সাবেক মিত্র জামায়াতের সঙ্গেই লড়াই হবে বিএনপির।তবে স্থানীয় জনতার দাবিÑক্ষমতায় এমন নেতারা আসুক যারা হবেন সত্যিকার অর্থেই জনবান্ধব। নাগরিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে যারা কাজ করতে পারবেন, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ থেকে জেলাবাসীকে যারা মুক্তি দিতে পারবেনÑ আগামী দিনের নেতৃত্ব তার হাতেই তুলে দিতে চান তারা।

জানা গেছে, জেলার চারটি উপজেলার বিশাল অংশজুড়ে বিস্তৃত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার চর। ঘাঘট, কাটাখালী, করতোয়া নদীরও রয়েছে অনেক ছোট-বড় চর। নদীভাঙন, যোগাযোগ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীগুলো। দেশের একমাত্র রেলওয়ে ফেরিঘাট চর ও নাব্যসংকটে বন্ধ রয়েছে। বালাশি ও বাহাদুরাবাদঘাট নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে, কিন্তু ফেরি চলাচলে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু বা টানেল নির্মাণে অতীতের সরকারগুলো অনেক আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি।

এছাড়া জেলায় নেই কোনো ভারী শিল্পকারখানা। একটিমাত্র চিনিকল থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে সেটি বন্ধ। নেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এখানে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এলাকার মানুষ এখন অনেক আশাবাদী। তারা যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষার উন্নতি দাবি করেন। আগামী ত্রয়োদশ নিবার্চনে এলাকাবাসীর এসব দাবি প্রাধান্য পাবে। তাই যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, দাবিগুলোর প্রতি তাদের বেশি জোর দিতে হবে।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ)

পৌরসভাসহ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-১ আসন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় বিএনপিতে নতুন মুখের ছড়াছড়ি। তবে একক প্রার্থী নিয়ে প্রচারে নির্ভার জামায়াত। এনসিপি, জাপা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের তেমন কোনো সাড়া নেই। এই আসনটি জামায়াতের একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে জামায়াতের এ শক্ত ঘাঁটিতে তাদের আধিপত্যের ছেদ ঘটে। জনগণ হয়ে পড়েন ভোটাধিকার বঞ্চিত। তবে আসনটিতে এখন আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এই দল থেকে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে নবীন-প্রবীণ মিলে অর্ধডজনেরও বেশি নেতার দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। যোগাযোগ রাখছে কেন্দ্রীয়ভাবে। গত জুলাই বিপ্লবের পর জামায়াত আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তারা একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে এ আসনটি নিজেদের কব্জায় নেওয়ার দৌড়ে দিন-রাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা নায়েবে আমির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাজেদুর রহমান। তিনি গোটা উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনমত গঠনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আগে থেকেই এই আসনটি জামায়াতের দখলে থাকায় বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় ছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় এবং জাতীয়পার্টির কোনঠাসা হওয়ায় জামায়াতের বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা করা যায়। অপরদিকে গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসের মনোনয়নপ্রত্যাশী মুফতি মাহমুদ আল মামুনও ভোট চেয়ে এলাকায় কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক বাবুল আহম্মেদ, সদস্যসচিব মাহামুদুল প্রামাণিক, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রুটেক্স পুপ ঢাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি রুহুল আমিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম সরকার, বিশিষ্ট শিল্পপতি আরেফিন আজিজ সরদার সিন্টু, সবার পরিচিত মুখ সাবেক পিপি ও বিএনপির সাবেক উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ। তবে বিএনপি’র জেলা সভাপতি ডা. ময়নুল হাসান সাদিকের কারনে আভ্যন্তরিন দলীয় কোন্দলের জন্য নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই দুই গ্রুপের মধ্যে একই স্থানে সমাবেশ আহবান করায় প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারী করতে হয়েছে।

গাইবান্ধা-২ (সদর)

গাইবান্ধা সদর উপজেলাকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধা-২ আসন গঠিত। জেলা সদরের কারণে সব রাজনৈতিক দলের কাছে এ আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ আসনটি নিজেদের দখলে নিতে চায় সবাই। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এই আসনে জেলা আমির ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল করিম সরকারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। তাদের নেতাকর্মীরা সংগঠনকে বিস্তার করার জন্য দাওয়াতি কাজসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোটও চাওয়াসহ ভোটারদের সমর্থন আদায়ের ব্যাপারে সংগঠনটি গোটা এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে নিবন্ধনের সঙ্গে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও ফিরে পাওয়ায় জামায়াতের প্রতি ভোটারদের সমর্থন বেড়েই চলছে। ফলে প্রচারে গতি এসেছে দলটির।

অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এই আসনে এখনো প্রার্থী ঠিক করেনি দলটি। তবে আসনটিতে বিএনপির পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রামবিষয়ক সম্পাদক আনিছুজ্জামান খান বাবু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হামিদুল হক সানা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও জিয়া পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল আওয়াল আরজু, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রয়াত খন্দকার আহাদ আহম্মেদের স্ত্রী শায়লা ইসলাম।

আসনটিতে এনসিপিসহ স্বৈরাচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে শরিকদের কেউ ভোটের মাঠে নেই।

গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর)

আসনটিতে বিএনপি-জামায়াত কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মইনুল হাসান সাদিক। আর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জেলা শূরা সদস্য মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু। তারা দুজনই ভোটের মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছেন। ডা. সাদিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা দিনরাত সাধারণ জনগণের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ভোটারদের কাছে ভোটও চাচ্ছেন। কিন্তু তিনি ইতিমধ্যেই এলাকায় বিতর্কিত অবস্থানে রয়েছেন। জানাগেছে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে একটি গ্রুপ তাকে মেনে নিতে নারাজ। এমনকি তার বিরুদ্ধে সমাবেশ বিক্ষোভ মিসিল এবং মানববন্ধন করেছেন। শুধু তাইনয় সাদুল্যাপুরে বিএনপি দুইগ্রুপে কোন্দলের কারনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা পর্যন্ত জারি করতে হয়েছিল।

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু সাংগঠনিক দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছেন। তাকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে জামায়াত। বর্তমানে জামায়াতে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দলের নিবন্ধন, মার্কা দাঁড়িপাল্লা ফিরে পাওয়ায় সংগঠনের কাজ তৃনমূল পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এদিকে এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরো রয়েছেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম রফিক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আইনজীবী ফরহাদ হোসেন নিয়ন, সাবেক ছাত্রনেতা ড. মিজানুর রহমান মিজান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রওশনারা ফরিদসহ অনেকেই।

এই আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও গাইবান্ধা জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী নাজমুল হাসান সোহাগ নিবার্চনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইসলামপুর গ্রামে সোহাগের জন্ম। গণঅধিকার পরিষদ থেকে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী সুরুজ্জামান সরকার।

গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ)

জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) সংসদীয় আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গোবিন্দগঞ্জ। এই আসনটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উপযুক্ত। এ কারণে আসনটি ঘিরে সব দলের রয়েছে আলাদা হিসাব-নিকাশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই আসনটিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বড় দুই দলই। কারণ বিগত ১২টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চারবার, বিএনপি দুবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, স্বতন্ত্র দুবার ও জাসদ প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন।

এই আসনে দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত-বিএনপি নিজেদের মধ্য সুসম্পর্ক ধরে রেখেছে। এখানে রাজনীতি নিয়ে দুই দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো রেষারেষি নেই। বিভিন্ন প্রোগ্রামে দুই দলের নেতারা সৌহার্দমূলক আচরণ করছেন। তবে সামনের দিনে ভোটের রাজনীতিতে এই দুই দলই হবে পরস্পরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা আমির বর্তমান কেন্দ্রীয় ইউনিট সদস্য ও গাইবান্ধা রাবেয়া ক্লিনিকের স্বত্তাধীকারি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আব্দুর রহিম সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে এই উপজেলার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নেতাকর্মী মিলে জনগনের কাছে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। বিএনপির কোন হেভিয়েট প্রার্থী না থাকায় এ আসনটি জামায়াতের দখলে চলে যাওয়ার সম্ভবনা নিশ্চিত করে বলা যায়।

অন্যদিকে বিএনপির কেউ কেউ অভিযোগ করছেন দলের দুর্দিনের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অনেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে পদবাণিজ্য করছেন। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে চান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রংপুর বিভাগ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক কবির আহম্মেদ (মেডিসিন ফারুক), সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিংকন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ওবায়দুল সরকার বাবলু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক কবির আহমেদ প্রমুখ।

অন্যদিকে এ আসনে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ডা. আবদুর রহিম সরকারকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। ডা. আবদুর রহিম তার দলের কর্মী-সমর্থক নিয়ে দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি ভোটের জন্য দিনরাত মানুষের কাছে যাচ্ছেন। চিকিৎসক হিসেবে অর্জন করা সুনাম ভোটের মাঠে তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা)

ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গাইবান্ধা-৫ আসন। আগামী জাতীয় নির্বাচন মাথায় রেখে এই নির্বাচনি এলাকায় প্রধান দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশী ও প্রার্থীরা এরই মধ্যে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এই আসনটি দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ না থাকায় দিনের ভোট রাতে করায় তারা একক ভাবে এখানে কর্তৃত করে আসছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতেতে আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার কারনে তাদের জাতীয়পার্টি কিছু সমর্থন থাকলেও জনগন তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে জেলা সিনিয়র নায়েবে আমির বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়ারেছ প্রধানকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই সাঘাটা-ফুলছড়ি দুটি উপজেলায় ব্যপক ভাবে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও বসে নেই তারা আসনটি পাওয়ার জন্য ভোটারদের মাঝে বিভিন্ন ভাবে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। এবং ইতিমধ্যেই দুটি উপজেলায় বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানাগেছে দীর্ঘদিন পর সুযোগ পাওয়ায় তারা এবারে দাড়িপাল্লায় ভোট দিবেন। যেহেতু ইতিপূর্বে আওয়ামীলীগ সরকার থাকার পরও এলাকায় তেমন কোন উ্ন্নয়ন হয়নি। এমনকি বালাসিঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌবন্দরটিও পুর্ণতা পায়নি। যে জন্য জনগনের ক্ষোভের অংশ হিসেবে তারা এবারে বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে বেছে নিতে চান। অপর দিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন জেলা কমিটির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি আলহাজ নাহিদুজ্জামান নিশাদ, শিল্পপতি ফারুক আলম সরকার, শিল্পপতি নাজেমুল ইসলাম নয়ন ও ময়নুল ইসলাম শামীম। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীরা এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামী নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা সদরের ভোটার আনিছুর রহমান বলেন, স্বৈরাচার হাসিনাসহ মানুষ হত্যার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের বিচার করাসহ দেশ সংস্কার করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ পেলেই জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাবু বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। সংগঠনের কাজ অব্যাহত রাখছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন ইউনিটে কাউন্সিল হচ্ছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছি। তবে ভোটের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। শুধু হাইকমান্ডের নির্দেশনার অপেক্ষায়।

জামায়াতে ইসলামীর জেলার সহকারী সেক্রেটারি ও গাইবান্ধা পৌরসভা মেয়র প্রার্থী ফয়সাল কবির রানা বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক দল। এই দলের গণতান্ত্রিক চর্চা অনেক শক্ত। আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রার্থী পরিচিতির পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক গণসংযোগ চলমান।’ ফয়সাল কবির রানা আরো বলেন, জামায়াত বরাবরই সমাজসেবার মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জনগণের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। জনগণও গাইবান্ধায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের ব্যাপারে ইতিবাচক। মূলত জামায়াত এখন গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সে জন্য আমরা আশা করছি, গাইবান্ধা ৫টা আসনেই আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করবো। এমনকি এজন্য এখন থেকে সে ব্যাপারে মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।