নির্বাচন বিলম্ব হলে দেশের চলমান অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা যদিও ইনিয়ে বিনিয়ে আশ্বস্ত হয়েছি যে, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সমস্ত কর্মকান্ড সাজাচ্ছেন কিন্তু সেই কর্মকান্ডগুলো জনগণের সামনে প্রকাশিত নয়। সেই কর্মকান্ড জনসমক্ষে প্রকাশিত ও দৃম্যমান হতে হবে যে, আমরা আসলেই সেদিকে যাচ্ছি কিনা।

রমযানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন বলেন, বাজারের অবস্থা ভালো না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস। মানুষের পেটে যদি ভাত না থাকে, দ্রব্যমূল্যে ক্রয় ক্ষমতা যদি মানুষের না থাকে এবং তাদের আয়ের সাথে যদি ক্রয় ক্ষমতা কোনো সঙ্গতি না থাকে, পারচেঞ্জিং ক্যাপাসিটি কমতে কমতে যদি তলানি যায়, তাহলে মানুষ সরকারের ভালো কর্মকান্ডকেও কিন্তু সামালোচনা করবে। আমি আশা করব, সরকার গরীব মানুষের দিকে লক্ষ্য দিবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে ‘মানবাধিকার নিশ্চিতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান।

তিনি বলেন, এখন অনেকে বলে, উনারা শুধু নির্বাচন নির্বাচন করছেন এবং সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চাইছে। সংস্কার তো আমরা চাই। আমরাই সবচাইতে আগে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি। তখন সরকার কিভাবে যাবে আমরা জানতাম না। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি ফ্যাসিবাদ পতনের পরে আমরা যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে লিপ্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমরা যদি জয়ী হই, তাহলে সবাইকে নিয়ে সেই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করব একটি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য, সমস্ত রাষ্টীয় কাঠামোগুলোকে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কার করব।

সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের উদ্বেগ হচ্ছে, সংস্কার যেগুলো নির্বাচনমুখী সেগুলো আমরা চিহ্নিত করি এবং সেগুলোর ওপরে গুরুত্ব দেই, বাস্তবায়ন করি। কিন্তু এখানে আমাদের যত দিন যাচ্ছে তাতে আমাদের মনে হচ্ছে, এ যেন গণতন্ত্র উত্তরণে পথ এটাকে যেন আরও দীর্ঘায়িত করা যায় সেজন্য কিছু কিছু কুট কৌশল প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেটা থেকে আমরা যেন বিরত থাকি, সেই আহ্বান সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাচ্ছি।

আওয়ামী আমলের নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আপনারা শুধু আয়না ঘরের কথা শুনেছেন বা আমাদের মুখে আমাদেরকে গুম করার কাহিনী শুনেছেন, ইতিহাস শুনেছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই্। যারা আয়না ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে তারা হয়ত ভিজিট করেছে, কথা বলেছে বা আমরা কথা বলছি কিন্তু যাদের হদিস পাওয়া যায়নি তারা তো কথা বলতে পারছে না। যা শুনেছি, তার যদি কিছুমাত্রও সত্যি হয় তা হলে বাংলাদেশের মতো এরকম বর্বর জঘন্যতম হত্যাকান্ড, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড, গুম-খুনের ইতিহাস হয়ত আফ্রিকার জংগলেও কোনোদিন হয়নি।

সালাহ উদ্দিন বলেন, সেই রকম একজন স্বৈরশাসক. সেই রকম একজন ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনাকে এখনো আমরা অনুসোচনা করতে দেখিনি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে এখনো পর্যন্ত গণহত্যার দায় স্বীকার করে অনুসোচনা করে, ক্ষমা চেয়ে তারপরে বাংলাদেশে রাজনীতি করবে এই কথা বলতে শুনিনি। এটা ভাবতে অবাক লাগে উল্টো তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহনকারী সাধারণ নাগরিকরাই যেন অপরাধ করেছে। তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে মুক্তির পাবার জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে।

সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুমের সভাপতিত্বে ও আলী আকবর সিরাজীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, মুক্তিযোদ্ধা দলের নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।