জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায়। দেশের একজন সরকার দুপুরের ভাত খেতে না খেয়ে পাশের দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই সব কিছুর মূলে রয়েছে কর্তৃত্ববাদী শাগণ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির নামে বিভাজন বা বিভক্তি চায় না। অন্যান্য দলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু আমরা প্রতিহিংসায় যাবো না। কোনো ব্যক্তি অধিকার ও মর্যাদার জন্য সে কোন দলের সেটা দেখা হবে না। সবার অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। তাই পিআর পদ্ধতি চালু হলে ফ্যাসিস্ট তৈরি হওয়া বন্ধ হবে। পিআর হলে কর্তৃত্ববাদীর রাজনীতি বন্ধ হবে। পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে। আগে যে তকমা বা ব্র্যান্ডিং এর রাজনীতি ছিলো এটা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে জুলাই জাতীয় গণদ ও পিআর পদ্ধতির ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।

মাওলানা আবদুল হালিম আরো বলেন, আমরা মনে করি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক রক্তের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে। তাই আমরা জনগণের স্বার্থে ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন আদায় করে ছাড়বো। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, অবশ্যই গণভোট হতে হবে এবং সেটা নবেম্বরের মাধ্যমে হতে পারে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একইসাথে হলে বিড়ম্বনা হতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদের আইনী ভিত্তি ছাড়া এ দেশের জনগণ নির্বাচন মানবে না বলে আমরা মনে করি। গণভোট হলে ভবিষ্যতের রাজনীতি একটি নিশ্চিত পথ পাবে। গণতন্ত্র ও দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তি এক হয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবো। পিআর এর ক্ষেত্রে ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দল পিআর এর পক্ষে ঐক্যমত হয়েছে। তবে ২৬টির মধ্যে কেউ কেউ উচ্চকক্ষ বা কেউ নিম্নকক্ষ চেয়েছে। তবে সবাই পিআর এর পক্ষে। বাংলাদেশের জনগণ আমাদেরকে সাড়া দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কথা বলেছে অনেকে। এখানে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশনে তালিকা দিতে পারে। এটার বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। তাই পিআর পদ্ধতির অপরিহার্যতা রয়েছে।

মাওলানা হালিম আরো বলেন, আমাদের ৫ দফা দাবিতে ফ্যাসিস্টের সহকারী অর্থ্যাৎ জাতীয় পার্টিকেও নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। তারা ভোট দিতে পারবে কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদীর সহযোগী, গুম খুনের সাথে জড়িত ছিলো তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

সবশেষে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে এককেন্দ্রিক দল যারা মনে করে, সেটা এখন অতীত। জামায়াত এখন দল, মত, নির্বিশেষে সকলের দল। এক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন আমাদের সকলের জন্য অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। আমরা বাংলাদেশে ৫৪ বছরের রাজনীতির পট পরিবর্তন করতে চাই। শিবিরের ৫৪ বছরের আস্থাই তাদেরকে বিজয় এনে দিয়েছে। এর আগে, বৈঠকে জামায়াতের নেতৃবৃন্দদের কাছে পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন গণমাধ্যমকর্মীরা। পরে সেগুলোর গঠনমূলক উত্তর দেন জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা। এসময়, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের জামায়াতের আমীর এডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবদুল মতিন।

কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি মু. মাহবুবর রহমান এর পরিচালনা আরো বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মু. শফিকুল আলম হেলাল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী নুর উদ্দিন, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শহিদ উল্লাহ, কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি লুৎফুর রহমান, কুমিল্লা বার্ডের সাবেক মহাপরিচালক ড. মাসুদুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. সফিকুর রহমান পাটোয়ারী। ওলামাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মাওলানা জালাল উদ্দীন, ছাত্রশিবির কুমিল্লা মহানগরী সভাপতি হাসান আহম্মেদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি হাফেজ মাজারুল ইসলাম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মহিউদ্দিন রনি, এনডিএফ কুমিল্লা জেলা সভাপতি ডা. জহিরুল হক বাবর, এনডিএফ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ সেক্রেটারি, ডা. গিয়াস উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিল মোশারফ হোসাইন, মিজানুর রহমান, হাসান মজুমদার। সাংবাদিক মধ্য উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল, সেক্রেটারি জাহিদুর রহমান, সহ-সেক্রেটারি বাহার রায়হান, নির্বাহী সদস্য কামাল উদ্দিন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদ উল্লাহ মিয়াজী, যুব বিভাগের সভাপতি নজির আহম্মেদ, ওলামা বিভাগের সভপতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার।