বিজয় বা স্বাধীনতা শুধু একটি মাত্র ভূখণ্ড অর্জন নয় বরং প্রকৃত  বিজয় বা স্বাধীনতা হচ্ছে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা সহ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকারের স্বাধীনতা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবে এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। 

তিনি আজ জাতীয় সংসদের  ন্যাম ভবনের সামনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় যুব বিভাগ আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব  কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় যুব বিভাগের সভাপতি  ও কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সভাপতিত্বে  এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১৪ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, ঢাকা-১৭ আসনের ডা. এস এম খালিদুজ্জামান, ঢাকা-১৬ আসনের   কর্নেল (অব.) আব্দুল বাতেন, ঢাকা-৬ আসনের জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, নাসির উদ্দীন ও জামাল উদ্দিন, ঢাকা  মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার নো’মান আহমেদী ও যুব বিভাগের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাঈনুদ্দীন প্রমুখ।

অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সে ঐতিহাসিক স্থান যেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলো। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আধিপত্যবাধী মনোভাব ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের কারণে আমরা বিজয়ের স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারিনি এবং আমাদের স্বাধীনতাও সুরক্ষিত হয়নি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, পাক বাহিনী সেদিন আমাদের কাছে আত্মসমর্পন না ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা জগজিৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমর্পন করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক জেনারেল এজি ওসমানী ছিলেন অনুপস্থিত। কেন অনুপস্থিত ছিলেন সে প্রশ্নের আজও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাই পাক বাহিনীর আত্মসমর্থন ভারতীয় বাহিনীর কাছে বিবেচনায় প্রতিবেশী দেশটি ১৬ ডিসেম্বরকে তাদের বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে। এর মাধ্যমে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছে।

তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতে সহযোগীতার প্রসঙ্গে বলেন, ভারত আমাদের স্বাধীনতা নয় বরং পাকিস্তানের সাথে ১৯৬৫ সালে যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছিলো। তারা আমাদের দেশের স্বাধীনতার-সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি না দিয়ে আওয়ামী বাকশালীদের মাধ্যমে দেশকে করদরাজ্যে পরিণত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলো। কিন্তু আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে সে  অবস্থার অবসান হয়েছে।

তিনি ভারতের এমন ন্যাক্কারজনক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ সহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ওসমান হাদী মৃতুঞ্জয়ী আমাদের জাতীয় বীর। এমন সময় তার ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে, যার মাত্র ১ দিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় যে, জাতীয় নির্বাচন বাঞ্চাল করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই হাদীর ওপর এ ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। মূলত, এ জুলাই যোদ্ধাকেই শুরুতেই টার্গেট করা হয়েছে। কুচক্রীরা আর কাদেরকে টার্গেট করেছে তা আমরা জানিনা। তবে তালিকা বেশ দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, জুলাই যোদ্ধা সহ সকল প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে সবার জন্য প্রস্তুত করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও ভয়ভীতিহীনভাবে ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, শরীফ ওসমান হাদী আধিপত্যবাদী অশক্তির বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। আজ যখন আমরা বিজয় র‌্যালী করছি, তখন এ জাতীয় বীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কিন্তু এক হাদীকে হত্যা করে জনগণের কন্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না বরং হাদীরা বারবারই ফিরে আসবে।

সভাপতির বক্তব্যে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। কিন্তু নেতিবাচক ও বিভেদের রাজনীতির কারণে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। নানা ছলছুঁতায় মহল বিশেষ আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক  মূল্যবোধ এখনও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়নি। তাই অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করতে আমাদেরকে বিভেদের রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। তিনি দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকলকে যেকোন ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।