জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী জালিম সরকারকে আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে পতন ঘটানো হয়। এ ঘটনা গৌরবের ও অহংকারের। এই জুলাই বিপ্লবের পটভূমি রচনা করতে চার হাজারের অধিক মানুষকে গুম খুনের শিকার হতে হয়েছে, দুই লক্ষাধিক মানুষ জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। এই বিপ্লবের শেষ বিজয়ের জন্য দুই হাজারের অধিক তরুণ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিরিশ হাজারের অধিক আহত হয়েছেন, অঙ্গ হারিয়েছেন। এ জুলাই বিপ্লব অনেক কষ্টে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত, এ বিপ্লব অনেক দামি। পৃথিবীর ইতিহাসের সকল সফল বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের একটা ঘোষণাপত্র বা প্রোক্লেমেশন থাকে কিন্তু আমাদের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র এখনো করা হয়নি অথবা করতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি একটি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার এবং কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

শনিবার (১৪জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউন্জ হলে 'নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিস' এর উদ্যোগে "বাংলাদেশ ২.০ - জুলাই ঘোষণাপত্র প্রস্তাবনা " শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন। এই আলোচনা সভায় জুলাই আন্দোলনে সগৌরবে অংশগ্রহণকারী ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামরিক ও বেসামরিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন জুলাই বিপ্লবের যে চেতনা, যে সংজ্ঞা এবং যে আকাঙ্ক্ষা তাই হলো এই ঘোষণাপত্র। এই ঘোষণাপত্র হলো নিজের জীবন উৎসর্গকারী প্রতিটি সন্তানের সাথে তার মাতৃভূমির এক অলিখিত চুক্তি যেখানে সে আবেদন জানাচ্ছে যে আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন এক বাংলাদেশ তৈরি কর যেখানে বৈষম্য থাকবে না, ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হবে। অতীতের রাজনীতি এবং অতীতের ভুল আর কখনো পুনরাবৃত্তি হবে না। সকল বক্তারা দৃঢ় কন্ঠে বলেন যে জুলাই বিপ্লবের আত্মত্যাগ কোনভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া হবে না এবং জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে। এ ঘোষণা পত্রে থাকবে জুলাই বিপ্লবের সংজ্ঞা, চেতনা, স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা। একই সাথে বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ ২.০ পুনর্গঠনের রোডম্যাপ থাকবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন- নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস (NDJ) এর সভাপতি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাসান নাসির (অবঃ)। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু র সাবেক দুইবারের ভিপি ও নাগরিক ঐক্য এর সভাপতি- মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারী- ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, The New Nation প্রাক্তন সম্পাদক- মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাবেক কূটনীতিক- সাকিব আলি, বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও টাওয়ার হ্যামলেট, লন্ডন এর চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিল- আ ম অহিদ আহমদ, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি- ড. ফেরদৌস আরা খানম, DUJ এর সভাপতি- শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আহমদ রফিক হাফি., রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জবান এর সম্পাদক- রেজাউল করিম রনি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক- সিবগাতুল্লাহ সিবগাহ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ) এর আহ্বায়ক- আলী আহসান জোনায়েদ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ) এর প্রধান সমন্বয়কারী- রাফে সালমান রিফাত, জাতীয় নাগরিক পার্টি এর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াঁজো প্রধান- আরিফুল ইসলাম আদীব, ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক- শরিফ ওসমান হাদি, ছাত্র অধিকার পরিষদ এর সভাপতি- বিন ইয়ামিন, বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক- শাহ মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, জুলাই ঐক্য এর অন্যতম সংগঠক- প্লাবন তারিক, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহবায়ক- আশরাফ উদ্দিন মাহাদি, জুলাই রেভ্যুলেশনারী এলায়েন্স এর মুখপাত্র- ফানতাসির মাহমুদ, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ এর সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক- মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ সহকারী সদস্য সচিব- গালীব ইহসান, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ন মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চলের)- এডভোকেট আলী নাসের খান, সমন্বয়ক ইয়াছমিন মিতু, আপ বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সদস্য- আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ, শহীদ মেজর তানভীর এর মিসেস তাসনুভা মাহা। আরো উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগন। সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন NDJ সেক্রেটারী-জেনারেল লেঃ কর্নেল হাসিনুর রাহমান, বীর প্রতিক (বরখাস্ত)।

নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস (NDJ) একটি প্রিমিয়ার নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ ও অংশগ্রহণমূলক সংলাপের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করে। সংস্থাটি নিরাপত্তা নীতিমালা, সামরিক সংস্কার ও জাতীয় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নিবেদিত।