আগামী ২৫ ডিসেম্বর দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ইতি ঘটিয়ে দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগমন ঘিরে নানা আয়োজন চলছে বিএনপিতে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানকে এমন সংবর্ধনা দেয়া হবে, যা দেশের ইতিহাসে অতীতে কখনোই ঘটেনি। এছাড়া তার জন্য বাসভবন এবং অফিসও প্রস্তুত করেছে বিএনপি।
জানা গেছে, গুলশান এভিনিউর ১৯৬ নং বাসাতে উঠবেন তারেক রহমান। এই বাসার পাশেই ভাড়া করা বাসা ‘ফিরোজা’য় থাকেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বারও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া গুলশানে আরেকটি বাসা ভাড়া নেয়া হয়েছে, যেটি থেকে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গুলশানের ৯০ নং সড়কে ১০/সির নতুন কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে জাতীয় রিল-মেকিং প্রতিযোগিতা কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন।
টানা ১৮ বছর লন্ডনে নির্বাসিত থাকার পরে আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরছেন তারেক রহমান। তার আগমন উপলক্ষ্যে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ২৫ তারিখ হয়রত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছালে তাকে নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা জানাতে উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের নেতার অপেক্ষায় আছে দেশবাসী। সেদিন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সড়কে দুই পাশে সুশঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়ে প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাবে। আমরা সেই প্রস্তুতির কাজ করছি।
গত সোমবার গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তারেক রহমানকে কীভাবে অভ্যর্থনা দেয়া হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমানের বাসভবন ঠিক করা হয়েছে গুলশান এভিনিউ‘র ১৯৬ নং বাসাটি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়াকে এই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়। কয়েক মাস আগে এই বাড়ির দলিলপত্র বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে হস্তান্তর করেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তপক্ষের রাজউকে চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রিজু। সেই বাড়িতে উঠছেন তারেক রহমান। এই বাসার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাসার সামনে নিরাপত্তা ছাউনি বসানো হয়েছে। সড়কের সামনে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা জানান, এখানে তারেক রহমান থাকবেন, সেজন্য এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারেক রহমানের জন্য গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার চেম্বারের পাশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে তার জন্য। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলাদা চেম্বার আছে। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্যও আরেকটি চেম্বার করা হলো।
গুলশানের ৯০ নিয়ে সড়কের ১০ সি বাড়িটি ভাড়া নেয়া হয়েছে বিএনপির অফিস হিসেবে। চার তলা বিশিষ্ট এই ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে দোতলায় রয়েছে ব্রিফিং রুম। অন্যান্য তলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে গবেষণা সেল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাইরুল কবির খান বলেন, আমরা যারা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছি তারা এখন অধীর আগ্রহে সময় গুনছি কখন আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র, আধুনিক স্বনির্ভর রাষ্ট্র নির্মাণে স্বপ্ন দ্রষ্টা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন। সেই লক্ষ্যে আপনি যাই বলুন, আমাদের সব প্রস্তুতি তাকেই ঘিরে। ইনশাল্লাহ দেশের মানুষ যেমন প্রত্যাশা করছে, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতা হারনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন।
নতুন অফিস খোলার পরে মাহাদী আমিন বলেন, এটি বিএনপির একটি কার্যালয়। এখান থেকে নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মাহাদি আমিন বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে গণ মানুষের মাঝে রয়েছে তীব্র আবেগ, আকাংখা ও আগ্রহ। আমাদের নেতা বিশ্বাস করেন, আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনীতি এবং আদর্শের উর্ধে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমাদের এ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য।
মাহাদী আমিন আরও বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা একটি জাতীয় রিল মেকিং প্রতিযোগিতা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের এই আয়োজন শুরু হবে আজকে থেকে এবং এই প্রতিযোগিতা চলমান থাকবে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে দেশ এবং বিদেশের সব শ্রেণী এবং পেশার মানুষ দেশ গড়ার প্রত্যয় তাদের নিজ নিজ যে পরিকল্পনা, প্রত্যাশা, ভাবনা চিন্তা তা প্রত্যেকটি এক মিনিটের রিল ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে সাবমিট করতে পারবেন। এই রিল হতে পারে ছোট্ট একটা ভিডিও যেখানে যেকোন কন্টেন্টের মাধ্যমে প্রত্যেকটা অংশগ্রহণকারী তাদের নিজেদের বক্তব্য, স্যাটায়ার, গান, সংলাপ, ডকুমেন্টারি অ্যানিমেশন কিংবা কয়েকটি ছবি বা আর্টের সমন্বয় সেটি সাবমিট করতে পারবেন। যার মাধ্যমে হতে পারে গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে নতুন কোন ভাবনা হতে পারে সুবিস্তৃত কোন পরিকল্পনা কিংবা ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ ।
উল্লেখ্য ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেফতার হন তারেক রহমান। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনলাইনে।