মোঃ বদিউজ্জামান (ভালুকা) ময়মনসিংহ : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম ভালুকার রাজনীতি। এ আসনে প্রচারণায় এগিয়ে জামায়াত আর গ্রুপি দ্বন্দ্বে এগিয়ে বিএনপি
ময়মনসিংহ বিভাগের দক্ষিণ প্রবেশদ্বারে অবস্থিত শিল্পাঞ্চল খ্যাত ভালুকা উপজেলা। ১১টি ইউনিয়ন ও প্রথম শ্রেণীর একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ১৫৫ ময়মনসিংহ ১১ (ভালুকা) আসন। আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩৫৪৩৯০ জন যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭৫৪৫৫ জন, নারী ভোটার ১৭৮৯৩৩ জন আর তৃতীয় লিংগের ভোটার ২ জন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এ আসনটি নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এ আসনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ২ বার, মুসলিম লীগ ২ বার, জাতীয় পার্টি ১ বার ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়। এ আসনে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী নির্বাচিত হতে না পারলেও এবার প্রচার প্রচারণায় দলটি অনেক এগিয়ে। ২৪-এর গণআন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর দীর্ঘদিন একসাথে আন্দোলন করা বিএনপি এবং জামায়াত এখন একে অপরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আসনটি থেকে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী পাশ করলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের দখলে ছিলো। ৯৬ পরবর্তী সময়ে এ আসনে বিএনপি একাধিক প্রার্থী পরিবর্তন করেও তাদের দখলে নিতে পারেনি। এর কারণ হিসাবে স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন নাগরিকগণ বিএনপির দলীয় গ্রুপিং কোন্দলকে দায়ী করেন। ২০০১ সালে এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডক্টর শাহ মোহাম্মদ ফারুককে সে সময় ভালুকা উপজেলা বিএনপি ক্বারী গ্রুপ ও চৌধুরী গ্রুপ নামে দুটি গ্রুপে বিভক্ত ছিলো। তখন বিএনপির একটি গ্রুপের বিরোধিতার ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাক্তার অধ্যাপক এম আমান উল্লাহর নিকট বিএনপির প্রার্থী ডক্টর শাহ মোহাম্মদ ফারুক সূচনীয়ভাবে পরাজিত হন। ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পান সাবেক ছাত্র নেতা ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। পরবর্তীতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০০৮ এবং ২০১৮ সালে ধারাবাহিকভাবে মনোনয়ন পান ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, তখনও দলীয় কোন্দল ছিলো চরমে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও পরে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পান হবির বাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোর্শেদ আলম এবং তখন থেকে ভালুকায় বিএনপি বাচ্চু গ্রুপ ও মোর্শেদ গ্রুপের নামে গ্রুপিং কোন্দল পৌঁছে আরও চরমে। যার ফলে সে নির্বাচনে মোর্শেদ আলমের পরাজয় এবং ২৪ পরবর্তী সময়ে ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু দল থেকে বহিষ্কার হন ও মোর্শেদ আলম উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পান।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, মোর্শেদ আলম এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এডভোকেট আনোয়ার আজিজ টুটুল প্রচার প্রচারণা ও জনসংযোগ করেন। সম্প্রতি ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে আবারও দলীয় মনোনয়ন দেন বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর নেতৃত্বে তার গ্রুপের নেতৃবৃন্দ পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সভাসমাবেশ ও গনসংযোগে ব্যাস্ত সময় পার করছে।
অপর দিকে মোর্শেদ আলম গ্রুপের নেতাকর্মীরা ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সভাসমাবেশ করে সাধারণ মানুষের মাঝে শাড়ী লুংঙ্গী বিতরণ করে জনসংযোগে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। মোর্শেদ আলম গ্রুপের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের আশা করছেন। সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিবৃতিতে মোর্শেদ আলম নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন এই মনোনয়ন চুড়ান্ত নয় অচিরেই কেন্দ্র প্রার্থী পরিবর্তন করে আমাকে মনোনীত করবেন এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
বিএনপির দলীয় কোন্দলের বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী গত এক বছর আগেই একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ করে ব্যাপক সারা ফেলেছে এ আসনে। জামায়াতে ইসলামী এ আসনে সাবেক ছাত্র নেতা ও উপজেলা জামায়াতের আমীর ছাইফ উল্লাহ পাঠান ফজলুকে মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার পরে বিভিন্ন গ্রাম, মহল্লা হাট বাজার,স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসায় প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগে ব্যাস্ত সময় পার করছে দলটি। এ আসনে প্রশাসনিক ১০৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। ইতিমধ্যে ১০৫ টি ভোট কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্র কমিটি গঠন করেছে জামায়াতে ইসলামী। গঠিত কেন্দ্র কমিটির মাধ্যমে প্রচার প্রচারণায় হইচই ফেলে দিয়েছে।এবং গঠিত কেন্দ্র কমিটির পোলিং এজেন্টদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দলটি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তাদের উপজেলা সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা মামুনুর রশীদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এনসিপিসহ বাকি দলগুলোর প্রার্থীদের এখানে তেমন কোন প্রচার প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি।
জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছাইফ উল্লাহ ফজলু বলেন, সারাদেশের ন্যায় ভালুকায় দাঁড়ি পাল্লার জোয়ার উঠেছে মানুষ এখন পরিবর্তন চায় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে বিপুল ভোটে দাঁড়ি পাল্লা বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু বলেন,দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে আমার যোগাযোগ হচ্ছে আমি আশাবাদী সর্বোচ্চ ব্যবধানে এ আসনে ধানের শীষ বিজয়ী হবে।