জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জনগণের অভিপ্রায় ও গণদাবিকে উপেক্ষা করে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি বলেও জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, সংবিধান সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে যে ৪৮টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে জানাতে হবে। ভোটাররা সেই বিষয়ে জানার পরই গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মতামত দেবেন। কিন্তু একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে একজন ভোটারকে গণভোট দিতে হবে আবার প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটও দিতে হবেÑ এটা একটা সংকট তৈরি করবে। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে প্রতিটি নির্বাচনে কমবেশি কিছু ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা, বিশৃঙ্খলার কারণে ভোট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এবার কোনো কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার কারণে জাতীয় নির্বাচনের প্রতীকের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে গণভোটের কী হবে, এর কোনো জবাব (সরকারের কাছে) নেই।

গণভোটে জনগণকে কিসে ‘হ্যাঁ’ আর কিসে ‘না’ বলতে হবে, সেটি নির্বাচনের আগেই জানতে হবে উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভোটারদের গণভোটের বিষয়ে স্টাডি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে গণভোটের বিষয়ে বিস্তারিত ওয়েবসাইটে দিতে হবে। তারপর এই জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সুযোগ না দিয়ে দুটি ভোট একসঙ্গে দেওয়ার ঘোষণায় একটা সংকট তৈরি হলো। এই সংকট নিরসনের জন্যই জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি করছে বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট হলে সনদের আইনি ভিত্তি দৃঢ় হবে। পরে আইনি ভিত্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। সেই সংকট এখনো রয়ে গেছে। সরকারকে এই সংকট নিরসনের আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াতসহ সমমনা আটটি দল নিজ নিজ দলীয় ফোরামে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনা করছে বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ১৬ নভেম্বর দলগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। পরে আটটি দল সম্মিলিতভাবে তাদের করণীয় স্থির করবে। মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় বৈঠকে বসে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। সেখানে দলের লিগ্যাল এক্সপার্টরা থাকবেন। বিস্তারিত পর্যালোচনার পর সে ব্যাপারে দলের বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ আট দলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বহাল থাকবে বলে জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, আট দলের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রমুখ।

এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কয়েকদিন যাবৎ আওয়ামী ফ্যাসিবাদিরা দেশব্যাপী নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। সন্ত্রাসী লুটেরা, গণহত্যাকারী, খুনিদের আর এ দেশে ফিরে আসা সম্ভব নয়। জাতি তাদের প্রতিহত করেছে। আজও তারা এ দেশে দাঁড়াতেই পারেনি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের অগ্নি সন্ত্রাস, ভাংচুর ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যসাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এড. ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে দেশের সব মিডিয়া ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাসহ সবাইকে হুমকি দিচ্ছে তাতে আমরা বিস্মিত। যারা অন্যায় অপরাধ করেছে জাতি তাদের আর কখনো গ্রহণ করবে না। তাদের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। বিভিন্ন মৌলিক ইস্যুতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতসহ ৮টি দল ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগের নাশকতার প্রতিবাদে আজকে আমরা সারাদেশে মিছিল সমাবেশ করছি। আমরা মাঠে অবস্থান করছি। তারা সারাদেশে বাসে, গাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, ককটেল নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি।

গোলাম পরওয়ার বলেন, অবিলম্বে জুলাই সনদের আদেশ জারি করতে হবে। তার পরেই জুলাই আদেশের উপর গণভোট দিতে হবে। আমরা আশাকরি প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতসহ ৮টি দলকে সাক্ষাতের সময় দিয়ে বর্তমান সংকট নিরসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণাকে তিনি অভিনন্দন জানান। জামায়াতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পল্টন, গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, প্রেস ক্লাব, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইট এবং সাইন্স ল্যাব, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের রাস্তায়। ঢাকা মহানগরী উত্তরের মীরপুর ১০ ও ১১, আমিন বাজার, মগবাজার, ভাটারা, রামপুরা, খিলক্ষেত, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, মালীবাগ, বাংলামটরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।