রাফিক সরকার, ঠাকুরগাঁও: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী দিনে কোন দল দেশ পরিচালনা করবে তা এদেশের জনগণই বাছাই করবে। আমরা একটি রাজনৈতিক দল আমাদের একটি নীতি আছে, আদর্শ আছে। দেশের অর্থনীতি নিয়ে, আমাদের ভবিষ্যত সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে, চিন্তাভাবনা আছে। এভাবে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে আমি মনে করি যে গণতান্ত্রিক দলগুলো আছে বাংলাদেশে, তাদের প্রত্যেকেরই আমাদের মতো এই রকম বিভিন্ন পরিকল্পনা, যার সাথে জনগণের ভালো মন্দ স্বার্থ জড়িত, সেই সেক্টর নিয়ে তাদের নিশ্চয়ই লক্ষ্য উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা মতামত থাকতেই পারে। যে দল জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে, দেশের জনগণ তাদেরকেই আগামী দিনে দেশ পরিচালনার জন্য বেছে নিবে। সোমবার বিকালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের লড়াই সংগ্রামে সৈরাচারের পতন হয়েছে। সৈরাচার মুক্তির মধ্য দিয়ে এখনকার প্রত্যাশা দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। দেশের যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হবে। যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, সে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জনগণের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। দেশের কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন, সেই সমস্যাগুলোর সমাধান বের করে নিয়ে আসতে হবে, যাতে কৃষক এবং সামগ্রীকভাবে দেশের মানুষ উপকৃত হয়। দেশের যুবক, তরণ শ্রেণিসহ কোটি কোটি মানুষ আজ বেকার, এই বেকার মানুষগুলোর কর্মের ব্যবস্থা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। একইভাবে বাংলাদেশের নারীদের বহু সমস্যা আছে, সেকল সমস্যার সমাধান ও দিক নির্দেশনা দিতে হবে আমাদেরকে।

তিনি আরো বলেন, বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আজ বেশ কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করছে। বক্তব্য আমরা দিতেই পারি।প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের বক্তব্য দেয়ার অধিকার অবশ্যই আছে। কিন্তু আমরা সেই বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে দেশে যদি এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী হয়, যে পরিস্থিতিতে কোন অরাজকতা তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যে পরিস্থিতিতে দেশের পলাতক সৈরাচারআবার ফিরে আসার যে পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে, তাহলে সেটি দেশ ও দেশের জনগন এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অবশ্যই সেটি কোনভাবেই ভালো হবে না। দেশের মানুষ আজ প্রত্যাশা করে যে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত উপস্থাপন করবে। তাদের চিন্তা ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করবে। জনগণ বাছাই করে নেবে কে জনগণের জন্য আমাগী দিনে নেতৃত্ব দিবে। যাদের আদর্শ, নীতি, উদ্দেশ্য, আদর্শ, পরিকল্পনা জনগণ পছন্দ করবে, তাদের ওপরই দায়িত্ব অর্পন করবে। আমরা যদি জনগণকে বাইরে রেখে, তাদের কাছে না গিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলো একটি জায়গায় বসি, আলোচনার পরিবর্তে, একটি সিদ্ধঅন্তের পরিবর্তে, যদি নিজেরাই কথা বলতে থাকি তাহলে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরী হবে।

নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, কেউ যেন দেশের গণতান্ত্রিক পক্রিয়াকে ব্যবহত করতে না পারে সেজন্য আপনাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। যতক্ষন পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র পুন: প্রতিষ্ঠা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। জনগণের সমর্থিত নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। যদিও আগামী নির্বাচন আমরা যততটা সহজ ভাবছি, ততটা সহজ নয়।

এর আগে প্রথম অধিবেশনে সকাল সাড়ে এগারোটায় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঠাকুরগাঁওয়ের এই একই মাঠে জনসভায় দেয়া ভাবষনের স্মৃতিচারন করেন। আজকে সমগ্র জাতি উন্মুখ হয়ে আছে, একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করব। পার্লামেন্ট গঠন করব। দেশ গনতন্ত্রে ফিরে যাবে, ঠিক তখনই এই সমস্যাগুলো সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর করিম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল খালেক ও অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান সভাপতি ও মির্জা ফয়সল আমিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের ৩ মার্চ তৈমুর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে সভাপতির পদটি খালি হয়। সম্মেলনে সভাপতি পদে মির্জা ফখরুলের ছোট ভাই ও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনের কোন প্রতিদ্বন্দি না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন প্রতিদ্বন্দির মধ্যে শরিফুল ইসলাম সম্মেলনের কয়েক ঘন্টা আগে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে তিনজনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পয়গাম আলী সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।