ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না; জবাবদিহিমূলক সরকার কায়েম হবে। একটি সুন্দর দেশ গঠন হবে। জবাবদিহিতার অভাবেই ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হ্রাস পাবে এবং সংলাপের সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে। তাছাড়া প্রতিটি ভোটের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে । সকল দল-মতের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার তৈরি হবে।

গতকাল রোববার বরিশালের মুলাদী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মুলাদী উপজেলা কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন তিনি।

পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, ১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে। পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেয়ার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একই সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনায়, বক্তব্যে ও মন্তব্যে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। কারণ কোন অবস্থাতেই পতিত ফ্যাসিবাদকে কোন সুযোগ করে দেয়া যাবে না।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখেছি মুলাদীর মাটি ইসলামের ঘাটি। সুতরাং কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আপনারা এবার ইসলামের পক্ষে রায় দিয়ে দেশ গঠনে সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বকে সুযোগ দিন।

সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই বরিশাল-০৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে হাতপাখার সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা হাফেজ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ বরকত, বরিশাল জেলার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাওলানা হাফিজুর রহমান, বরিশাল জেলা ইমাম সমিতির সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা ইসমাঈল হোসেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মুলাদী উপজেলা সভাপতি এফএম মাইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাওলানা আবুল কাশেম জিহাদীর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ।

আজ দেশের সকল জেলায় বিক্ষোভ মিছিল: তফসিলের আগে গণভোট আয়োজন করা, জুলাই সনদের আইনীভিত্তির জন্য সাংবিধানিক আদেশ দেয়া, জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, গণহত্যার বিচার, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার ও বিচারকালীন কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের ৫ দফা দাবীতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের ৪র্থ ধাপের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার দেশের সকল জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশে যে সংস্কারের সুযোগ তৈরি হয়েছিলো তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে এই সরকার। সংস্কারের নামে যে জুলাই সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে নোট অব ডিসেন্টের কারণে সনদের চেয়ে বরং সংস্কার সম্পর্কিত মতামত দলীলে পরিনত হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি এখনো ঠিক করা হয় নাই। ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাড়বাড়ন্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অথচ তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এমন বাস্তবতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে উৎসর্গিত রক্তের দায় শোধ করতে রাজপথে থাকা জরুরী মনে করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারই অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। আগামীকাল দেশের সকল জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। এতেও যদি সরকারের বোধদয় না হয় তাহলে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচির পথে হাটতে বাধ্য হবে জনতা। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।