বাংলাদেশ আজ স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে একটি সুস্থ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সকল রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সংস্কারের পরে নির্বাচন। এর আগে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার এই কতগুলো কাজ সমপন্ন করার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ময়মনসিংহে সফরে আসছেন এবং তিনি কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে কর্মী সম্মেলনে আমীরে জামায়াতের ময়মনসিংহে আগমন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে ও ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের আমীর মোঃ আব্দুল করিমের ব্যবস্থাপনায় প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমি আপনাদের এই কথা তুলে ধরতে চাচ্ছি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের জন্য যে কমিশন, সংস্কারের জন্য যে কমিশনের যুক্ত হয়েছে। এই কমিশনের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। আগামী ৩০ এপ্রিল তাদের সাথে আমাদের সরাসরি আলোচনা শুরু হবে। জামায়াতের প্রতিনিধিগণ সকাল ১০ টা থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। যে বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি তার মধ্যে রয়েছে সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ। সে অনুচ্ছেদের কারণে বাংলাদেশে বার বার স্বৈরশাসকের আবির্ভাব হচ্ছে। এবং স্বৈরশাসক তৈরি হচ্ছে। দেশ তার কাঙ্খিত মানে চলতে পারছে না। তাই এই অপরিহার্য সংবিধনের অনুচ্ছেদগুলোর সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। সংস্কারের মধ্যে থাকবে নির্বাচন কমিশন। যে নির্বাচন কমিশনার ৫৪ বছরের মধ্যে একটি ভালো নির্বাচন দিতে পারেনি। কেয়ারটেকার সরকার হলে একরকম আর দলীয় সরকার হলে আরেক রকম নির্বাচন হয়। এটা কোন দেশের আইন হতে পারে না, কোন সিস্টেম হতে পারে না।

এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এই দেশ এই দেশেরে জনগণের। এই জন্য সুনির্দিষ্ট সংস্কারের ভিতিত্তে নির্বাচন কমিশনের পিছনে যে ভূত লেগে আছে সেই ভূতমুক্ত নির্বাচন কমিশন আমাদের গঠন করতে হবে। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী তখনই স্বৈরাচার হন যখন একাধারে তিনি দলীয় প্রধান থাকেন, রাষ্ট্র প্রধান থাকেন আর সংসদীয় নেতা থাকেন। এই তিনটিতে একই প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্যতা আনেতে হবে। সংবিধানে অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে আংশিক পরিবর্তন আনতে হবে। এই সব বিষয় নিয়ে একটি বিশাল পরিবর্তন করতে হবে। এই পরিবর্তন সাধন না করে যদি নির্বাচন দেয়া হয় তাহলে এই নির্বাচন কোন অর্থবহ নির্বাচন হবে না।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যারা গণহত্যা করেছেন তাদের বিচার যদি আগে না হয় এবং কোনভাবে যদি নির্বাচনের পরে চলে যায় তাহলে বিচার বিলম্বিত হবে। এবং বিচার না হওয়ার একটা আশঙ্কা থাকবে। এজন্য আমরা জোর দাবি জানিয়েছি অবশ্যই গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ১৩৭টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। বিচার বিভাগে যারা আছেন প্রতি সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবস মামলা কাজ পরিচালনা করেন তাহলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব। আপনার অবগত আছেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ইউরোপীয় ইউনিয়নে সফরে গিয়েছিলেন। সেখান ৮টি প্রতিষ্ঠান, সরকার ও প্রতিনিধির সাথে উনার কথা হয়েছে। এবং সেখানে তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তিনি উপস্থাপন করেছেন। অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে যেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ অন্যান্য গণতন্ত্রকামী প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসে, বিনিয়োগ বাড়ায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতিতে অংশগ্রহণ করেন এই বিষয়ে আমীরে জামায়াত একটি দলের প্রধান হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন। উনাদের পক্ষ থেকেওে ভালো সাড়া পেয়েছেন। গত ১৭ তারিখে তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জাতির সামনে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আসাদুজ্জামান সোহেন, সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, সহকারী সেক্রেটারি আনোয়ার হাসান সুজন, মাহবুবুল হাসান শামীম, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মহাবুবুর রশীদ ফরাজী, মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি শরিফুল ইসলাম খালিদ, ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলা জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ।