ইসলাম বিরোধী নারী সংস্কার নীতি জনগণ মেনে নিবে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসলাম নারীদের পূর্ন নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা দিয়েছে। ইসলামের ছায়াতলে নারীরা পরিপূর্ণ নিরাপদ। আধুনিকতার নামে ইসলামী আদর্শ ছেড়ে মানুষের তৈরি মতবাদে জড়িয়ে নারী সমাজ অধিকার হারিয়েছে, নিরাপত্তা হারিয়েছে। নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ইসলামী আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। অন্তবর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত নারী সংস্কার কমিশনের সংস্কার সুপারিশে নারীদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কথিত ঐ কমিশন সরাসরি ইসলামী আদর্শের বিপক্ষের সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে নারী সমাজ অধিকার হারাবে, নিরাপত্তা হারাবে, মর্যাদা হারাবে। তাই নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিল করে ইসলামী আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে হাজারীবাগ উত্তর থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি আরো বলেন, যারা নির্বাচনের আগে ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তারাই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, তারাই ধর্ম ব্যবসায়ী। জামায়াতে ইসলামী ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না; জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে। যেই সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সোনার মদিনা গঠিত হয়েছে। সেই সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াতে ইসলামী লড়াই করছে। জামায়াতে ইসলামী এমন একটি সমাজ গঠন করতে চায়, যেই সমাজে মারামারি, হানাহানি, নৈরাজ্য, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি থাকবে না। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণ জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গিকার। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নামাজ কায়েম, যাকাত আদায় এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ বন্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিবে। এই চারটি উপদানের মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। ইসলামকে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে মেনে নিতে হবে।

কোন চক্রান্ত জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না দাবি করে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিঃশেষ করতে অতিতের সব সরকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী নিঃশেষ হয়নি, হবে না। কারণ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য লড়াই করে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে। আওয়ামী লীগের পর এখন নতুন করে আবার কেউ কেউ জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র দেশের ভিতরে থেকেও হচ্ছে, দেশের বাহিরে থেকেও হচ্ছে। তবে যত ষড়যন্ত্রই হোক জামায়াতে ইসলামী আদর্শের দিক থেকে একচুলও লড়বে না। ফলে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখা যাবে না। জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের সংগঠন হিসেবে কাজ করে, করবে। কোন ষড়যন্ত্রের কাছে অতিতেও মাথানত করেনি, আগামীতেও করবে না।

জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে একই দাবি জানিয়ে আসছে অবশ্যই নির্বাচনের আগে সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। এতে স্থানীয় প্রশাসন শক্তিশালী হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী না করে নির্বাচন দিলে ক্ষমতা লোভীরা আওয়ামী লীগের মতই পেশীশক্তি ব্যবহার করে নাটকীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য হবে। সেজন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে সংবিধান, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সহ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌখিক সংস্কারের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচনও সম্পন্ন করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন না করে অতিতের মত লোক দেখানো নির্বাচন দিলে সেই নির্বাচন হবে পাতানো নির্বাচন। আর এই সুযোগে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। তাই তিনি, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত ও সংস্কার শেষে ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সর্বপ্রথম বেকারত্ব দূরীকরণের ব্যবস্থা করবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ব্যতিত সুদ-ঘুষের ব্যাধি থেকে জাতিকে মুক্ত করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমে সুদ প্রথার নির্মূল করা হবে। জবাবদিহিতার মাধ্যমে ঘুষ নির্মূল করা হবে। সুদ ও ঘুষ দুটোই ভয়াবহ ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এই ব্যাধি থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে ইসলামী সমাজ বিনির্মানের বিকল্প নাই। তাই তিনি আগামীর বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ বিনির্মানে উপস্থিত বিশিষ্টজনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

হাজারীবাগ উত্তর থানা আমীর মো. মাহফুজ আলমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মো. শহিদুল ইসলাম সোহেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য, বাংলাদেশে ল'ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধানমন্ডি জোন পরিচালক অধ্যাপক নূর নবী মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুর রহমান, ধানমন্ডি জোনের সহকারী পরিচালক মো. শেখ শরিফ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া হাজারীবাগ উত্তর থানা জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।