ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে একটা নতুন সরকার আসছে। এই সরকারকে ছাত্র-জনতা রাজনৈতিক দল সবাই মিলেই আমরা তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রফেসর ইউনূস সাহেবকে। তিনি রাজনৈতিক লোক না, ভোট করে বেড়ান না। কিন্তু উনি অনেক জ্ঞানী গুণী লোক, দেশে বিদেশে তার খুব সুনাম। এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যে পুরস্কারটা, উনি পেয়েছেন। ওটাকে বলে নোবেল পুরস্কার। এরকম একটা মানুষকে আমরা এখন দায়িত্ব দিয়েছি দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার এবং দেশে একটা নির্বাচন করার। এই সরকারে প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে এখানে একটা নির্বাচন করবে, যে নির্বাচনে সবাই ভোট দিতে পারবে। আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব। কারণ দেশের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে। বিগত ৫৩ বছরেও শান্তিপূর্ণ ভোট দিয়ে সরকার পরিবর্তন করতে পারি নাই। সোমবার (২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড শেখ বাজার এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছর তারা আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তাদের অত্যাচার, দাপটে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি নাই। তাই পনের বছর আপনাদের সাথে আমার খুব কম দেখা হয়েছে। বিগত ১৪ সালের নির্বাচনে এই এলাকার একজন ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। গড়েয়াতে নয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। খোঁচাবাড়িতেও একজনের হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে তারা। ১৮ সালের নির্বাচনে যখন আমরা আপনাদের এলাকায় আসতে চেষ্টা করলাম তখন তারা আমাদেরকে আপনাদের এলাকায় ঠুকতে দেয়নি। হামলা করেছে, আমাদের গাড়িগুলো ভাংচুর করেছে। তাহলে এতোদিন পর আজকে আপনাদের কাছে কেন আসলাম। আজকে আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসিনি, এসেছি এ কথা জানতে যে, আপনারা জানেন গত ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এদেশের মানুষ, ছেলেরা তাকে আন্দোলন করে তাড়িয়ে দিয়েছে। ১৫ বছর সে দেশের মানুষের ওপর এতো অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন করেছে যে, দেশের মানুষ তার ওপর বিরক্ত হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত ১৫ বছরে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমাদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে তারা পাচার করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুট করেছে। ব্যাংকে তাদের টাকা জমা হয়েছে অনেক, আর আমাদের লোকেরা গরীব থেকে গরীব হয়েছে। বিএনপির যাদের গন্ধ পেয়েছে তাদের চাকরি হয় নাই, ব্যবসা বাণিজ্য হয় নাই। চাকরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। চাকরি নিতে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা লাগছে না হলে আওয়াী লীগ হতে হয়েছে। এই যে একটা অবস্থা গেছে এই অবস্থার প্রেক্ষিতে দেশের যে কাঠামোটা ছিল, সে কাঠামোটা নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ১৯৯১ সাল থেকে আমি নির্বাচন করতেছি। তখন অনেক যুবক ছিলাম, এখন বুড়ো হয়ে গেছি। দেশনেত্রী আমাকে বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছেন। যে কারণে আমাকে সারাদেশে কাজ করতে হয়। তাই আপনাদের সাথে খুব একটা দেখা হয় না।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের আলেম ওলামাদের পর্যন্ত সম্মান করেনি। তাদের ওপর মামলা হামলা করেছে, জেলে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে আমাদের অসংখ্য ছেলেদের মেরেছে। আমাদের হিন্দু ভাই বোনেরা তাদের ধর্ম ঠিকমত পালন করতে পারেনি। আমাদের মা বোনেরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়, কখন কোন বিপদ হয়ে যায়। এ অবস্থা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থা থেকে যদি আমরা বের হতে না পারি তাহলে এ দেশটাই আর থাকবে না।

এ সময় সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।