* সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের এপিএসের দুই নৌযান জব্দের আদেশ

দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশীদ, তার স্ত্রী ফাতেহা পারভীন লুনা এবং তাদের দুই কন্যা ফাহমিদা ফারাহ ফাবিয়া ও নুসরাত যারীন আদ্রিতার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রিয়াজ হোসেন এ তথ্য জানান।

এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থার উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান আকন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের’ অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশীদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা দেশের ভেতর পলাতক রয়েছেন। তারা যে কোনো সময় দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা একান্ত প্রয়োজন।

জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী আনিসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : দুর্নীতির মামলায় জেমকন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিস আহমেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলছে, জেমকন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিস আহমেদের ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ ৮০ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া তার নামে খোলা ২০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৭৯ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৫৬ টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। শাস্তিযোগ্য অপরাধের প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুদক মামলা করে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কাজী আনিসের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জরুরি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ২০২৪ সালের ৫ অআস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ওই সরকারের সময়কার সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও শিল্পগোষ্ঠীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় জেমকন গ্রুপের অর্থপাচারের বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। দুদক গত এক বছরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার পরিবারসহ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থপাচার, কর ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের এপিএসের দুই নৌযান জব্দের আদেশ : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেনের মালিকাধীন দুটি নৌযান জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মনিরের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, জব্দ করা দুটি নৌযান হল এমডি সেইলর-১ ও এমডি সেইলর-২। এগুলোর মূল্য ১০ কোটি টাকা।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন নৌযান দুটি জব্দ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আসামি মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ১৪২ টাকার জ্ঞাত ‘আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি নিজ নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৪ টাকা ‘হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করেন’।

এই অভিযোগে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। আসামি তার সম্পত্তি অন্যত্র ‘বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাতের চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়। তাই মামলা নিষ্পত্তির আগে এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য এসব সম্পদ জব্দ করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করে দুদক।

গত ৯ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন সাবেক এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় এ বছরের ১৩ জানুয়ারি মনিরের ৫ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এর সঙ্গে তার নামে থাকা আটটি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ এসেছে।