বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে ইসলামবিদ্বেষী একটি চক্রের আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর অবমাননার বিরুদ্ধে দেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষ ১৩ দফা দাবি নিয়ে রাজধানীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হন। সেদিন নিরীহ মানুষদের ওপর চালানো হয় নির্মম গণহত্যা। গভীর রাতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় বাহিনী চারদিক থেকে ঘিরে বর্বরোচিত সামরিক কায়দায় গণহত্যা চালায়। নিরীহ ধর্মপ্রাণ জনতার ওপর নির্বিচার গুলী চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষকে। অনেক শহীদের লাশ গুম করা হয়। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, শাপলার শহীদদের সঠিক তালিকা তৈরি, গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ’শাপলা গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।

গতকাল সোমবার ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ‘৫ মে শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার দাবিতে মানবপ্রাচীর’ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানবপ্রাচীরে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, এইচআরএম সম্পাদক সাইদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ।

কেন্দ্রীয় সভাপতি আরও বলেন, ২০০৮ সালে ভোট চুরির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, আল্লামা সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদীদের ওপর গণহত্যা, শাপলা চত্বরে ইসলামপ্রিয় আলেম-ওলামা ও নবীপ্রেমিক জনতার ওপর নারকীয় হামলা এবং সর্বশেষ ২৪ জুলাইয়ের ভয়াবহ গণহত্যা চালায়। এখন সময় এসেছে এই সকল পরিকল্পিত গণহত্যার বিচার করার। গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না হলে ফ্যাসিবাদ রোধ কখনোই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর আমরা একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নয় মাস পেরিয়ে গেলেও শাপলা ও জুলাই আন্দোলনসহ কোনো গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হয়নি। শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি, আহতরা এখনো হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। অথচ এ অবস্থার মধ্যেও গণহত্যাকারীরা শহীদ পরিবারগুলোকে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে।

তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, আপনারা কোনো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসেননি। তাই গণহত্যার মতো অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের আইনের বয়ান শোনাবেন না। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কেউ কেউ আজ ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের পরিণতি শেখ হাসিনার পরিণতির চেয়েও ভয়াবহ হবে।

তিনি আরও বলেন, হাজার শহীদের রক্ত মাড়িয়ে আমরা আজ এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখান থেকে আমাদের স্পষ্ট দাবি-সকল গণহত্যার বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যায় শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদেরকে একটি শ্রেণি সব সময় মূলধারার বাইরে রাখতে চায়। অথচ আমাদের জাতিসত্তার বিকাশে আলেম-ওলামাদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদেরকে মূলধারার বাইরে রেখে এই জাতিসত্তার ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।

খুলনা ব্যুরো : ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বর গণহত্যার বিচারের দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত মানবপ্রাচীরের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির খুলনা মহানগর শাখা।

সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে এ মানবপ্রাচীরের আয়োজন করা হয়।

মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন খুলনা মহানগর ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মুশাররফ আনসারী, আব্দুল আউয়াল ও জাহিদুর রহমান নাঈম। এতে মহানগরী ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন, অর্থ সম্পাদক আসিফ বিল্লাহ, সাহিত্য সম্পাদক বেলাল হোসেন, প্রকাশনা সম্পাদক আদনান মল্লিক যুবরাজ, এইচআরডি সম্পাদক সেলিম হোসেন, আইন সম্পাদক আঃ রশিদ, ছাত্রআন্দোলন সম্পাদক ইমরান হোসেন, প্লানিং সম্পাদক নাঈম হোসেন, সোস্যাল মিডিয়া সম্পাদক খায়রুল বাশার, বিএল কলেজ সভাপতি হযরত আলী, সদর দক্ষিণ থানা সভাপতি জুবায়ের আল মাহমুদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে ঘটানো গণহত্যার বিচার দাবিতে চট্টগ্রামে মানবপ্রাচীর কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল সোমবার নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংগঠনটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইবারহিম হোসেন রনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে ইসলামপ্রিয় জনতা নবী ও ইসলামের অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের বিচারের দাবিতে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার রাতের আঁধারে নির্মমভাবে সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অভিযান চালিয়ে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচনা করেছিল। অনেক গণমাধ্যম সে ঘটনার সরাসরি সম্প্রচারের পরপরই সরকারের রোষের মুখে পড়ে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়।’

৫ মে গণহত্যার বিচারের দাবিতে রাজশাহী ও বরিশালে শিবিরের মানবপ্রাচীর

রাজশাহী ব্যুরো : রাজধানীর শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে গণহত্যার বিচারের দাবিতে মানবপ্রাচীরের আয়োজন করেছে রাজশাহী মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি শামীম উদ্দীনের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন হতে বক্তারা জানান, ২০১৩ সালের ৫ মে, ২০২৪ এর ৫ আগস্টসহ যেসব গণহত্যা করা হয়েছে তার দ্রুত বিচার দাবি জানান। তারা স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, ২০০৬ সালে পল্টনে গণহত্যা, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে যেসব গণহত্যা করা হয়েছে সকল গণহত্যার প্রত্যেকের বিচারের দাবি জানানো হয় এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ এখনো বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এসব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের জোর দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ফাউন্ডেশন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভূইয়া, মহানগর ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক ইমরান নাজির, রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

বরিশাল মহানগর শিবিরের মানববন্ধন

বরিশাল অফিস : শাপলা চত্বরে আওয়ামী সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরিশাল মহানগর। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় নগরীর টাউন হল চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর সেক্রেটারি হাসান মাহমুদ নাঈমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগর সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম। মানববন্ধনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও বরিশাল জেলা সভাপতি আকবর হোসাইন।

আরো উপস্থিত ছিলেন, মহানগর প্রচার সম্পাদক রাশেদুল হাসান, অর্থ সম্পাদক আব্দুর রহমান সুজন, বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক ওবায়দুর রহমান, মহানগরের প্রশিক্ষণ সম্পাদক নাজমুল হক, মাদ্রাসা সম্পাদক মুহিবুল্লাহ আরাফাত, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আবির হোসেন নোমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।