বরিশাল অফিস : জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভোটের বিকল্প নেই। দেশের মানুষ এমন একটি নির্বাচন চায় যাতে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সেজন্য প্রয়োজন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। কেননা প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়নের একমাত্র পন্থা হলো পিআর পদ্ধতি। পিআর পদ্ধতি নিয়ে গরিমসি না করে প্রয়োজনে গণভোট দিয়ে পিআর এর জনমত যাচাই করুন। কেন্দ্র ঘোষিত ৫ দফা দাবিতে বরিশাল মহানগর জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের এদেশে আর সুযোগ দেয়া হবেনা। এখনো প্রশাসনের মধ্যে ফাসিস্টের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে, তাদের সরিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করতে হবে। জাতীয় পার্টি সহ যেসব দল ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা জরুরী। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরেই নির্বাচন দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

সমাবেশে সভাপতি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন বাবর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগর এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মাদ আতিকুল্লাহ। আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাহমুদ হোসাইন দুলাল, মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা মতিউর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু, মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমান।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমীর মাস্টার আব্দুল মান্নান ও ড.মাহফুজুর রহমান, মহানগরীর এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি তারিকুল ইসলাম, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা জয়নাল আবেদীন, আব্দুস সত্তার, শামীম কবির, মাওলানা শফিউল্লাহ তালুকদার, মাহফুজুর রহমান আমিন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন ইয়ামিন, অ্যাডভোকেট আজম খান, নুরুল হক সোহরাব, ইসলামি ছাত্রশিবিরের বরিশাল মহানগর সেক্রেটারি আব্দুর রহমান সুজন ও বরিশাল জেলা সভাপতি আকবর হোসেন, জেলা সেক্রেটারি সাইয়্যেদ আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কয়েক হাজার জামায়াতের নেতাকর্মী।

রংপুরে বিক্ষোভ সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে

সুষ্টু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে রংপুর অফিস ঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এম পি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে পি আর পদ্ধতিতে আগামী ফেব্রুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকলের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য ভাবে আয়োজন করতে হবে। এ লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশ এবং জাতির স্বার্থে সকল শান্তিকামী রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ পুর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও রংপুর মহানগরী শাখার আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী আঞ্চল পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, জামায়াতের রংপুর মহানগর সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক কাজল অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষে র্নিবাচন করতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে র্নিবাচন না হলে আর একটি ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে। স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টরা আবার ফিরে আসার সুযোগ পাবে। জামিায়াতে ইসলামী জালিমদের ফিরে আসার সুযোগ দেবে না। সকল গণতান্তিক মনা দলকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কোন টালবাহানা চলবেনা। এখনও ৫ মাস সময় আছে, জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও খুনী এবং দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে হবে। বিদ্যমান কাঠামো না বদলালে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের দান এর কিছুই হবে না। গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সকল দলকে উপেক্ষা করে তাদের সাথে পরামর্শ না করে কেবল একটি দলের সাথে গোপন পরামর্শ করে বির্তকিত নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী সকল দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম, নির্যাতন, গণহত্যা ও দূর্নীতির দৃশ্যমান বিচার অবশ্যই করতে হবে। গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের সহায়তায় ১৫ বছর ধরে জাতির উপর জুলুম-নির্যাতন এবং দেশের সম্পদ লুট াার মানুষ খুন করেছে। এজন্য একই সাথে ফ্যাসিষ্ট স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করারও তিনি দাবী জানান। তিনি বলেন, দীর্ঘ জুলুম নির্যাতনের বিনিময়ে এদেশের মানুষ এখন ইসলাম মুখী হয়েছে। এই ফ্যাসিষ্টের বিরুদ্ধে দেশের র্স্বাথে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

এ সময় সমাবেশে ফোরাম আব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনির্য়াস (এফডিইবি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সাত্তার শাহ্, জামায়াতে ইসলামর রংপুর মহানগর সহকারী সেক্রেটারি রায়হান সিরাজী ও আল আমীন হাসান, কোতয়ালী থানা আমীর মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, পেশাজীবি সাংগঠনিক থানা-২ এর আমীর অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, পরশুরাম থানা আমীর এডভোকেট মাহবুব আলম, মাহিগঞ্জ থানা আমীর মোহাম্মদ মোহসিন অলী, হাজীরহাট থানা আমীর বেলাল হোসেন, তাজহাট থানা আমীর এডভোকেট রবিউল ইসলাম, সদর উপজেলা আমীর মাওলানা মাজাহারুল ইসলাম, কোতয়ালী থানা আমীর মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা শাহজাহান সিরাজ, বাংলাদেশ স্থল বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল পরিচালক অধ্যাপক আবুল হাশেম বাদল, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রংপুর মহানগর সভাপতি এডভোকেট কাওছার আলী,ইসলামী ছাত্রশিবির রংপুর মহানগর শাখার সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল হুদা অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ স্টাইলে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।

গতকাল শুক্রবার বাদে আসর জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫-দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গণমিছিল নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে আবারও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।

জামায়াতের ৫ দফা দাবিগুলো হল- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। আর এসব দাবি সরকার মেনে নিলে আগামীকালই নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে।

প্রধান অতিথি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, আমরা যে দাবি বাস্তবায়নে জন্য রাজপথে নেমেছি, এসব দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসরদের দৃশ্যমান বিচার করবে এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, ড. ইউনূসের আশে পাশে অনেকে একটি দলের পকেটে ঢুকে গেছে। সরকারে ভেতরে থেকে অনেকে সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এটি মেনে নেবে না জনগণ। ফ্যাসিবাদের মতোই জনগণ তাদেরকে প্রতিরোধ করবে। সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রতিবন্ধকতা তৈরিকারীদের চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচনের জন্য এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি।

তিনি বলেন, অনেকে বলছে আমরা রাজপথে কেন নেমেছি? আমরা বলছি, রাজপথের আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছে দেশের জনগণ। কাজেই রাজপথে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা আমরা বাস্তাবায়ন করবো।

পিআর নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে গণভোটের দাবি জানিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, গণভোট দিন। জনগণ পিআর-এর পক্ষে আছে কি বিপক্ষে আছে। জনগণ যদি পিআর মানে অর্ন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায় আমরা তা মেনে নেব। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতি অকার্যকর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন। উক্ত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, গোটা জাতি উৎসব মুখর নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। তিনি আরো বলেন, কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জামায়াত নাকি নির্বাচন পিছাতে চায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই জামায়াত সবার আগেই তিনশত আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে কাজ শুরু করে দিয়েছে কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম চোখে পড়ে না। যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, প্রয়োজনীয় সংস্কারে বাধাগ্রস্ত করছে এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিরোধীতা করছে নিজেদের ভরাডুবি জেনে তারাই মুলত ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চায়।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল আয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে। সত্তুরের নির্বাচনের ম্যান্ডেট মেনে না নেয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের স্পষ্ট অবমাননা।

সমাবেশ ও গণমিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস এবং এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক, ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, কর্মপরিষদ সদস্য হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোসাইন, ফখরে জাহান সিরাজী সবুজ, মাহমুদুল আলম, জামায়াত নেতা ডা. মুহাম্মদ আবু নাছের, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ শফিউল আলম প্রমুখ।

সিলেট মহানগর জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে ড. হামিদুর রহমান আজাদ

সিলেট ব্যুরো: জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষা ছিলো রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার। সেই সংস্কার বাস্তবায়ন না করে নির্বাচন আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকারের শামিল। জামায়াত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। তাই নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে কর্মসূচী পালন করছে। শুধু জামায়াত নয়, দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই দাবিতে আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, এই কর্মসুচী দেখে কেউ কেউ বলেন আমরা না কি নির্বাচন বানচাল করতে চাই। যারা সংস্কার মানেন না, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায়না ও পিআর পদ্ধতি মানেনা, প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচন বানচাল নয়, জনআকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে সংস্কার কমিশন যাতে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে সেজন্যই আমাদের আন্দোলন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশে ফ্যাসিবাদের কবর রচিত হয়েছে। সুতরাং আর কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেয়া হবেনা। জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ জাতি জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতি নির্বাচনের দাবী পূরণ করেই ছাড়বে।

তিনি গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান পয়েন্ট প্রদক্ষিণ শেষে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে মহানগর ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটের হাজার হাজার জনশক্তি খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে অংশ নেন।

মিছিল পূর্ব রেজিস্ট্রারি মাঠের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি, সাবেক জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মাসুক আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা আমীর নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি এডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সভাপতি এডভোকেট আলিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রমূখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কি জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি বিশেষ দল নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যেনতেন উপায়ে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও ঐক্যমত্য কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত সেই বিশেষ দলের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সকল সংকট আলোচনার টেবিলে সমাধানে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সেভাবে না চাইলে রাজপথে সমাধানেও আমরা রাজি। জনমত যাছাই করতে চান তাও রাজী, গণভোট দিন। তবুও এই দেশে কাক্সিক্ষত সংস্কার ছাড়া সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় দিয়ে কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেয়া যাবেনা। তিনি আরো বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিনত করেছিল। আইন ও মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। ঠিক সেই সময় দেশের ছাত্র-সমাজ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদে দেশপ্রেমিক জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। যার ফলে স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত হয়। সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন ছিলেন হিন্দু এবং সিলেটের শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব ছিলেন একজন সাংবাদিক। কিন্তু তাদেরকেও জীবন দিতে হয়েছে। কারণ এটি ছিল ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থানের আইনী ভিত্তি ছাত্র-জনতার অধিকার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবি পূরণের বিকল্প নেই। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতন হয়েছে। নতুন করে আর কাউকে ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ দেয়া হবেনা। সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাক্সক্ষার প্রকৃত বাস্তবায়নের স্বার্থে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান শুধু জামায়াত নয়, দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার দাবি। অন্তর্বর্তী কালিন সরকারকে ছাত্র-জনতার আশা আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল গণহত্যার বিচার, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবি মেনেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের রক্তের সাথে কোন উপহাস ছাত্র-জনতা মেনে নিবেনা

রাজশাহীতে জামায়াতের বিক্ষোভ-সমাবেশে এ্যাড. হেলাল

রাজশাহী ব্যুরো: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেছেন, পিআর পদ্ধতি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ থেকে চিরতরে ফ্যাসিজমেরপথ রুদ্ধ হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সবচেয়ে উপযুক্ত সরকার। সরকারের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, কোনো সঙ্কট তৈরি না করে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আপনি নির্বাচন অনুষ্ঠান করুন। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে আবারো ফ্যাসিজমের জন্ম হবে, আরেকটি হাসিনা সরকারের জন্ম হবে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী নগরী সাহেব বাজার বড় মসজিদের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরী উদ্যোগে পাঁচ গণদাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমীর ড. মাওলানা কেরামত আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডল এবং রাজশাহী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম মোর্তুজার যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর এ্যাড. আবু মোহাম্মদ সেলিম, রাজশাহী সদর আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাজশাহী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল খালেক, রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রটারি অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসাইন ও অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সরকার, ব্যবসায়ী কল্যাণ সেক্রেটারি অধ্যাপক সারওয়ার জাহান প্রিন্স, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং রাজশাহী-৩ পবা মোহনপুরে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আসনের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন প্রমুখ।

মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, “জামায়াতে ইসলামী বরাবরই চেয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রভাব খাটানোর ফলে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না। আমরা দাবি করেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। ৫ আগস্ট ড. ইউনূস জুলাই ঘোষণা পেশ করেছিলেন। সেই ড্রাফটটা একটা বিশেষ মহলের প্ররোচণায় পড়ে জনআকাক্সক্ষাবিরোধী অনেক কিছু উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমরা সেটা সংশোধন করতে বলেছিলাম। যদি নির্বাচনের আগে তা সংশোধন করা না হয়, তবে দেশ মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে।” তিনি আরো বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দেয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ আমাদের বলছেন আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও কেনো আপনারা আন্দোলনে যাচ্ছেন। তার কারণ আলোচনা করা সত্ত্বেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। কোনো কিছুর চাপের মুখে সরকার এক শুভঙ্করের ফাঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ।

খুলনায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল---এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ

খুলনা ব্যুরো : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগীয় সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এরপর ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। সেই জনগণের ৭০ ভাগ পিআরের (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩১ দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে রয়েছে। একটি দলের কেউ কেউ বলছেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা বলতে পারে না। তাই পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে আছে নাকি বিপক্ষে আছে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা মেনে নেবো। কিন্তু তারা তো গণভোটকে ভয় পাচ্ছে। পিআরের মধ্য দিয়ে সকলের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যদি পেশীশক্তি ও কালো টাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট হয়, সরকার গঠন হয়, তাহলে কোনো দলের পক্ষে ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই, তাই তারা পিআর ঠেকাতে চায়। তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে রাজপথে থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলোস্থ সোনালী ব্যাংক চত্বরে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে খুলনা মহানগরী ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আমীর, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, খুলনা জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, নায়েবে আমীর ও খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মহানগরী সেক্রেটারি ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমীর ও খুলনা-১ নং আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা শেখ মো. আবু ই্উসুফ, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা জেলা সভাপতি মো. ইউসুফ ফকির, মহানগরী সেক্রেটারি রাকিব হাসান, প্রেরণা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী।

সরকারের উদ্দেশ্যে জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি বলেন, আর্টিকেল ৭-এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। এখন যদি দুই–তিন মাস আলোচনার পর একটি দল বলে যে এটা পরে হবে, তাহলে কেন এত পরিশ্রম করালেন? সেজন্যই বলছি আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। আমাদের রাজনীতি জনগণের আকাক্সক্ষা তুলে ধরার জন্য। আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তির জন্য আশাবাদী।

মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, আপনি সবাইকে ডাকুন, কনস্টিটিউশনাল অর্ডারের মাধ্যমে অথবা একটা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে এখনো সময় আছে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন করুন। তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বলছেন যে; এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমরা দেখছি অনেক সাংবিধানিক মেজর ইস্যুতে যে ভিন্নমতগুলো রয়েছে, আমরা বলেছি ঐকমত্য কমিশনও বলেছে দু’বারের অধিক কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। জুডিশিয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও হবে না।

মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, আন্দোলন শুরু হয়েছে। জন আকাক্সক্ষা পূরণে সরকারকে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে। এই পাঁচ দফা দাবি জনসাধারণের দাবি। পিআর পদ্ধতিতে কেন্দ্র দখল বা টাকা দিয়ে ভোট কেনা যাবে না বলে অনেকে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চান না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের লড়াই-সংগ্রামের নতুন লক্ষ্য হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ। ৫৪ বছরের শাসনের যে বাংলাদেশ, ৫ আগস্ট ছিল সেই বাংলাদেশের যে পরিচালনা, যে নেতৃত্ব–তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানের বিপ্লব। আমরা নতুন বাংলাদেশ চাই। যারা আবার পুরোনো কায়দায় এই দেশে পুরোনো শাসন ফিরিয়ে আনতে চায়, জনগণ তাদের সেই সুযোগ দেবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করা, সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা, অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের ‘দোসর’ জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের বিশেষ ট্রাইবুন্যালে বিচার ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা-এ দাবিগুলো জনগণের রক্তের দামে অর্জিত ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ রক্ষার শপথ। তাই এ আন্দোলনে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আজকের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল ঐতিহাসিকভাবে সফল করে পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়নে শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলে এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যে-কারও খেয়ালিপনা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ। তাই অবিলম্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার এই ৫ দফা দাবি মেনে নিয়ে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে ইনশাআল্লাহ।

বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর ডাকবাংলোস্থ সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শুরু হয়ে ফেরীঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড় ও সঙ্গীতার সামনে দিয়ে শিববাড়ি (শহীদ মীর মুগ্ধ) মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার জনতা অংশ নেয়।

কুমিল্লায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

কুমিল্লা অফিস : পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও জুলাই সনদ ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরী।

১৯সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার দিকে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে মিছিল পূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরীর আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ এতে সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল মতিন, মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর একেএম এমদাদুল হক মামুন। মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারী মু. মাহবুবর রহমান।

মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. কামারুজ্জামান সোহেল এর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন,কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি হাফেজ মাজারুল ইসলাম,

মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী কাউন্সিলর মোশাররফ হোসাইন, এডভোকেট নাছির আহম্মেদ মোল্লা,কুমিল্লা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী নাজমুল হাসান পঞ্চায়েত,সদর দক্ষিণ উপজেলা জামায়াতে আমীর মু মিজানুর রহমান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য কাজী নজির আহম্মেদ, অধ্যাপক জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসাইন সবুজ সহ অনেকে।

সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিলটি কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, লিবার্টিমোড়, মনোহরপুর, রাজগঞ্জ, মোগলটুলি হয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে গিয়ে শেষ হয়।

কর্মসূচিতে দলের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। এসময় এই মুহূর্তে দরকার পিআর আর সংস্কার, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, দিতে হবে দিয়ে দাও, জামায়াত-শিবির জনতা, গড়ে তোলো একতা স্লোগান দিতে দেখা যায়

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন,

আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা দাবি জানান।

তিনি আগামী নির্বাচনে কুমিল্লা ৬ আসনে সদর -সদর দক্ষিণ উপজেলার সর্বস্তরের জনগণকে ন্যায়ের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিতে নগরবাসীকে আহবান জানান।