গাজীপুর-৬ (টঙ্গী, গাছা, পূবাইল) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনয়ন দিয়েছে তুরস্কের তুকাত গাজী উসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমানকে। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তরের সাবেক সেক্রেটারি এবং তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, টঙ্গীর সাবেক ছাত্র সংসদ (ভিপি) ছিলেন ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে। ড. হাফিজুর রহমান তুরস্কের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে থাকা জামায়াতের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে ফেরেন।

এ বিষয়ে ড. হাফিজুর রহমান বলেন,‌ ‘আমাকে যখন আমীরে জামায়াত ফোনে জানালেন, আপনাকে গাজীপুর-৬ থেকে নির্বাচন করতে হবে, তখন আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে সবকিছু ছেড়ে দেশে ফিরে আসি। ইনশাআল্লাহ গাজীপুর-৬ থেকে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে পরিবর্তনের পথে কাজ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুর-৬ পরিবর্তনই আমাদের স্লোগান। এই এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আমরা শ্রমিক অধ্যুষিত এই অঞ্চলে শ্রমজীবী মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য ফ্রি ওষুধ সেন্টার চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’

আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে গাজীপুর মহানগরের এক রুকন সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে ড. হাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।

জামায়াত সূত্র জানায়, শিক্ষিত, তরুণ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী হিসেবে ড. হাফিজুর রহমানকে মাঠে নামিয়ে সংগঠনটি গাজীপুর-৬ আসনে নতুন রাজনৈতিক ধারা তৈরি করতে চায়। তোকাত গাজীপাশা ইউনিভার্সিটির এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. হাফিজ টার্কি জামায়াতের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রসঙ্গত, ড. হাফিজুর রহমানের জন্ম গাজীপুর জেলার কালনী গ্রামে। পড়ালেখার হাতেখড়ি কালনী ইসলামিয়া ফাজিল (বিএ) মাদ্রাসায়, যেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে (উপজেলা পরিষদ) বৃত্তি লাভের পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় পুরো প্রতিষ্ঠানে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপরের দেশের পড়াশোনার প্রায় পুরো সময়টাই কাটিয়েছেন টঙ্গীতে। তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার টঙ্গী শাখা থেকে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করার পাশাপাশি তা’মীরুল মিল্লাত থেকে ফাজিল ও কামিলও সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপে মনোনীত হয়ে গাজী বিশ্ববিদ্যালয়ে (আঙ্কারা) পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য তুরস্কে যান এবং ২০২০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ২০২১ সালে তুরস্কের তোকাত গাজি ওসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বর্তমানে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এ ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পেশায় একাডেমিশিয়ান ও গবেষক হলেও লেখালেখি তার শখ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে নিয়ে বাংলায় লেখা প্রথম বই ‘এরদোয়ান : দ্য চেঞ্জ মেকার’, আমার দেখা তুরস্ক এবং ইসলামী রাজনীতি তত্ত্বে রাষ্ট্র ধারণা; এই তিনটি বই-ই বেস্টসেলার তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর বাইরে বিশ্বখ্যাত জার্নালগুলোতে তার লেখা পিয়ার-রিভিউড আর্টিকেল, বুক চাপ্টার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন।

সূত্র: ডেইলি ক্যাম্পাস