বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, মানুষের মুক্তির জন্য প্রয়োজন সংগ্রাম। বিনা সংগ্রামে কখনো মুক্তি আসে না। যেমনিভাবে ছাত্র-জনতার সংগ্রামের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টকে বিদায় করা হয়েছে, তেমনিভাবে এখন জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি মানবিক ও ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ছাড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে না। সামাজিক বৈষম্য ও ধনী-গরিবের ব্যবধান কমিয়ে আনতে মাহে রমযান হচ্ছে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কুরআন নাযিলের মাসে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অথিথির বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন। ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহা. আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও আল ফালাহ প্রেসের ম্যানেজার খন্দকার রহুল আমিনের পরিচালানায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল লতিফ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালানা করেন ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের সেক্রেটারি ড. মো. হাবিবুর রহমান। ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অধ্যক্ষ মোঃ সাহাবুদ্দিন, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার চেয়ারম্যান একেএম রফিকুন্নবী, বাংলাদেশ পাবলিকেশন লিমিটেড বিপিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নূরুল আমিন, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দৈনিক সংগ্রামের চীফ রিপোর্টার শামসুল আরেফিন, ডা. সৈয়দ আনোয়ারুল আবেদিন, ডা. রুহুল আমিন, ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের সদস্য আবু হুরায়রা, আব্দুল কাইয়ুম আল ফয়সাল, আতিকুর রহমান, আবুল হাশেম মুন্সী প্রমুখ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, মাহে রমযানের তাৎপর্য সম্পর্কে অনেক আলোচনা আছে। আল্লাহ দ্বীনকে বিজয়ী করাকে জীবনের উদ্দেশ্য মনে করি। তাদের জন্য রমযান বড় একটি নেয়ামত। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সবধরনের খাবার ও প্রবৃত্তি, আল্লাহ নিষিদ্ধ সব কাজ থেকে বেঁচে থাকা হলো তাকওয়া। আল্লাহ অধিকার হলে তার বিধান পালনে চেষ্টা করে। তিনটি বিষয় রমযানে এবং ব্যক্তিগত জীবনে পরিহার করা উচিত ১. ভোগ, অধিক অর্থ-সম্পদ আহরণের মানসিকতা ২. কাম পশুত্ব পরিহার ৩. বিলাসিতা জীবন যাপন। যখন মানুষের মধ্যে যখন কাম প্রবৃত্তি জাগে সমাজে অনাচার অপসংস্কৃতি পাপাচারের প্রসার ঘটতে থাকে। আমরা রমযানে তাকওয়া অর্জন করে আল্লাহ প্রিয় বান্দা হবো। আমরা যদি রোজার বিধি বিধান মানতে পারি তবেই তাকওয়া অর্জন করতে পারবো। কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হলো সমাজে আল্লাহ বিধান চালু করা, চালু করার জন্য লড়াই সংগ্রাম করা। আল্লাহ শাসন আল্লাহ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠান করা। রোজা রাখা অবস্থায় রাসুল সা. বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ও রুবুবিয়াত প্রতিষ্ঠা করে শুকরিয়া আদায় করা। তাকওয়া অর্জনের মূল কথা হলো আল্লাহ মহত্ত্ব বড়ত্ব প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা।
অধ্যাপক পরওয়ার আরও বলেন, মাহে রমযানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত আমলকে আরো সুন্দর করতে হবে। কুরআনের সমাজ কায়েমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। রমযান তাকওয়া অর্জনের মাস। বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাস, আত্মা শুদ্ধিকরণের মাস।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, ইফতারে পূর্বের সময় দোয়া কবুলের সময়। রোজাদারদের দোয়া আল্লাহ শুনেন। সারাদিন রোজা রেখে দ্বীন ও দুনিয়ার শরিয়তের আলোকে কাজ করলে মহান আল্লাহ প্রতিদান দেন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন রোজা আমার আমি নিজে রোজার প্রতিদান দিব। মানুষের জীবনের কষ্টিপাথর হচ্ছে তাকওয়া। তাকওয়া হচ্ছে মুমিন জীবনের কষ্টিপাথর। যে ইবাদতে তাকওয়া নেই সে ইবাদতে সাওয়াব পাওয়া যাবে না। তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহ নির্দেশিত বিধি বিধান পালন করা, তাঁর আদেশ-নিষেধ মানা। রোজা উপবাস ফরজ নয় ফরজ হলো তাকওয়া অর্জন করা। আত্মসমালোচনা করার দরকার রোজার মাধ্যমে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি কিনা, যদি না করে থাকি তবে ফরজ ইবাদত পালন করার পরও কোনো সাওয়াব পাওয়া যাবে না। রোজার মধ্যে তাকওয়া থাকলে নফসের শক্তি দমন হয় এবং রুহের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে বৈষম্য মুক্ত যে সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করার কথা বলছি সেখানে কুরআন না থাকলে বৈষম্য দূর হবে না। ৫ আগস্ট পর রাষ্ট্রের যে পরিবর্তনে কথা বলা হচ্ছে এবং কুরআন ও সুন্নাহ আলোকে জামায়াত যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, যদি সেই অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার হয় তবে সমাজে রাষ্ট্রে বৈষম্য দূর হবে। আমাদেরকে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এই রমযান মাসেই বদরের যুদ্ধ হয়েছিল।
ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহা. আবদুর রব সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ফালাহ-ই আম ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল তাদের মাগফিরাত কামনা করছি। দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি আয়োজন করতে পারি নাই। ফালাহ -ই আম ট্রাষ্ট থেকে জনকল্যাণমুখী কাজ করতে পারি এজন্য দোয়া চাই।