সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের আরও ৫২ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনে গাজীপুরের এসব জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ২৬ কোটি ১৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। সংস্থার উপপরিচালক মনিরুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব তাদের এই স্থাবর সম্পত্তি জব্দের এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
তারিক আহমেদ সিদ্দিক পরিবারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলার মধ্যে এর আগে তাদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেয় আদালত। একই অভিযোগে ১৭ জুলাই এই পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে দুদক।
এবার গাজীপুরের জমি জব্দের আবেদনে দুদক বলেছে, তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও শাহীন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। জানা গেছে, তাদের মালিকানাধীন এসব সম্পত্তি তারা অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে অনুসন্ধানে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে তুলে ধরে দুদক বলেছে, অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন স্থাবর সম্পদ বা সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন বা স্থানান্তর, অথবা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করতে না পারেন সে জন্য সম্পদ জব্দ করার আদেশ চেয়েছে সংস্থাটি। শুনানির পর আদালত গাজীপুরে তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার স্ত্রীর এ জমি জব্দের আদেশ দেয়।
২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন তারিক আহমেদ সিদ্দিক। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার পরিবারের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক। তার আগে গুমের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের তালিকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তারিক আহমেদের নামও রয়েছে। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে সেখানে তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের প্রচ্ছায়া কোম্পানির নাম এসেছে। ইতোমধ্যে তিন বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করেছে দুদক। আদালত তারিক আহমেদ সিদ্দিক, শাহীন সিদ্দিক এবং তাদের মেয়ে নুরিন সিদ্দিকের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ১৩টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে। এসব হিসাবে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ২৭১ টাকা রয়েছে। তাদের ২৪ বিঘা জমিসহ ৫টি প্লট ও ৫টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেয় আদালত। জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে বারিধারার ডিওএইচএসের ৭ তলা বাড়ি, একই এলাকার ৭ তলা আরেকটি ভবনের তিনটিসহ পাঁচটি ফ্ল্যাট, পূর্বাঞ্চলের নতুন শহরে ২০ কাঠা জমির ৪টি প্লট এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি প্লট।