খুলনা ব্যুরো, ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জণগণের উপর জুলুম, নির্যাতন করে, দাম্ভিকতা দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। যারা নিকট অতীতে জনগণের উপর জুলুম নির্যাতন করেছিল, ভেবেছিল আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকবে, জনগণ তাদেরকে দেশছাড়া করেছে। আগামীতে যদি কেউ ক্ষমতায় এসে অতীতের মত জুলুম নির্যাতন নিপীড়ন নিষ্পেষণ চালাতে চায় তাহলে জনগণ তাদেরকেও দেশ ছাড়া করবে। সুতরাং অতীত থেকে গণতান্ত্রিক সকল দলকে শিক্ষা নিতে হবে। যারাই আগামী নির্বাচনে ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত হবে তাদেরকে জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী জুলুম, নির্যাতন, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি মুক্ত দেশ গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত সময়ের আগেই ঐক্যমত কমিশনের আলোচনায় সকল গণতান্ত্রিক দল যে যে বিষয়ে একমত হয়েছে সেগুলি লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় মৌখিক স্বীকৃতির জুলাই সনদ এদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। গতকাল শুক্রবার বিকেলে খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের শলুয়া বাজারস্থ ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

রংপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খুলনা জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ইউসুফ ফকির। তরুণ সরকারের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর গাজী সাইফুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান, আড়ংঘাটা থানা আমীর মাওলানা মনোয়ার আনসারী, দৌলতপুর থানা আমীর মাওলানা মোশাররফ আনছারী, আড়ংঘাটা থানার সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ হোসেন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহ সভাপতি ডা. হরিদাস মন্ডল, সহ সভাপতি বুদ্ধদেব মন্ডল, ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক অমিত বৈরাগী, হিন্দু যুব নেতা নিত্যানন্দ, গুরুপদ সরকার, আমানুল্লাহ হালদার, জাগরনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস, মহিলা ইউপি সদস্য পারভিন আক্তার, আওলিয়া হোসেন, প্রফুল্ল কুমার, বিধান চন্দ্র ঢালী, রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, মো. আলমগীর হোসাইন, মাওলানা ফয়েজ উদ্দিন, মো. আমান উল্লাহ, অধ্যাপক শেখ শাহিনুল ইসলাম প্রমুখ।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ২০০৯ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে পতিত সরকার জনগণের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০১৪ সালে ভোটার বিহীন নির্বাচন, ১৮ সালে রাতের ভোট, ২৪ সালে ডামি ক্যান্ডিডেট ব্যবহার করে নির্বাচনের মাধ্যমে মূলত, তারা একটা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। ২৪'র ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের অব্যাহত দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে অর্থশূন্য করেছে। এখন সময় দেশকে গড়ার। আমরা জামায়াতে ইসলামী একটি মানবিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়তে চাই যেখানে প্রতিটা নাগরিকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সমানভাবে ভোগ করতে পারবে। সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু বলে কোন শব্দ থাকবে না। আমরা সবাই বাংলাদেশী। সুতরাং দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই সমান অধিকার ভোগ করবো।

এমপি থাকাকালীন সময়ের কথা উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এমপি থাকাকালীন সময়ে আমি ফুলতলা-ডুমুরিয়ায় প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলাম। এই রংপুর ইউনিয়নের হিন্দু ভাইদের সৎকার করার জন্য শশ্মান ঘাট নির্মাণ, মন্দির উন্নয়ন, নতুন রাস্তা তৈরি, বিদ্যুতায়নসহ স্কুল-কলেজের উন্নয়ন করেছিলাম। আগামী নির্বাচনে আপনারা যদি আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করেন তাহলে আমি বিল ডাকাতিয়ার স্থায়ী সমাধানসহ এই অঞ্চলের অসমাপ্ত সকল কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

পরে সন্ধ্যায় ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড জামায়াত আয়োজিত অনুরূপ এক ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল। শেখ মহাসিন হোসেন বশিরের সভাপতিত্বে ও মাহমুদ হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানা আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের থানা সেক্রেটারি মো. নূর ইসলাম গাজী, জামায়াত নেতা ইউপি সদস্য হাফেজ গোলাম মোস্তফা, শাহ মাখদুম, শ্রমিক নেতা মো. মোজাম্মেল হক, মাওলানা লুৎফর রহমান, মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।

সাবেক এমপি আরো বলেন, জামায়াত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতিমুক্ত একটি ইসলামী কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়তে চায়। আমাদের মানবিক নেতা আমীরের জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ইতোমধ্যে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, এদেশের যুব সমাজকে বেকার রেখে সাম্যের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর রহমতে ও জনগণের ভালোবাসায় যদি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাই তাহলে এদেশের যুব সমাজকে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলবো। ছাত্ররা তাদের লেখাপড়া শেষ করে একহাতে সার্টিফিকেট আর এক হাতে চাকুরী নিয়ে ফিরবে। হয় চাকরি পাবে না হয় বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। সুতরাং জামায়াত ক্ষমতায় গেলে যুবসমাজ, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী সকল মানুষকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, মাদকমুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি মুক্ত দেশ গড়বো।