বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নানামুখী চক্রান্ত চলছে। এই বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এই বন্দর এ দেশের সম্পদ। এই বন্দর নিয়ে কোন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।

আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকালে নগরের ইপিজেড চত্বরে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর আয়োজিত বিশাল শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী-এর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াত মনোনীত চট্টগ্রাম ১১ আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ শফিউল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন নগর ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নজির হোসেন, মকবুল আহম্মদ ভূঁইয়া, বন্দর থানা জামায়াতের আমির মাহমুদুল আলম, ইপিজেড থানা আমির মোকাররম হোসেন, বন্দর থানা জামায়াতের সেক্রেটারি ইকবাল শরিফ, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের কার্যকরি সভাপতি সেলিম পাটোয়ারী প্রমুখ ।

নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যারা আমাদের দেশকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দিতে চায় না তারা এ বন্দরকে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। তারা আমাদেরকে আজীবন গোলামীর শিকলে আবদ্ধ রাখতে চায়। এদেশের শ্রমজীবী মানুষ আর কোন গোলামীর শিকলে আবদ্ধ হতে চায় না। আমরা সকল ধর্মের ষড়যন্ত্র ভেদ করে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব। একই সাথে শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশকে একটি শব্দ সোনার দেশে পরিণত করবো ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকার ও নাগরিক মর্যাদা নিয়ে আর সময় ক্ষেপণ করতে দেওয়া হবে না। শ্রমিকদের মজুরি, কর্মঘণ্টা ও জীবনমান উন্নয়নে অনেক গাল গল্প শুনেছি। ভ্রান্ত মতবাদ শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে তাদেরকে রাজপথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের অধিকার আদায় করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণে দেশে সকল সেক্টরে অনতিবিলম্বে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দর, গার্মেন্টস, তেল ও পরিবহন সেক্টরের সকল ন্যায্য দাবি অনতিবিলম্বে মেনে নিতে হবে। সকল শ্রমিকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রতিষ্ঠার জন্য মজুরি কমিশন গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রতিটি সেক্টরে শ্রমিকদের প্রতিনিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিবিএ নির্বাচন দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। সরকারি বেসরকারি খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের আবাসন ও চিকিৎসা সহ যাবতীয় নাগরিক সুবিধা উপস্থিত করতে হবে। অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে কোনভাবেই বিদেশী শক্তির কাছে ইজারা দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর করার জন্য সকল অংশীদারদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতি চাকা ঘুরে। তাই আমরা আশা রাখবো, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হোক এমন কোন পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করবে না। গার্মেন্টসশিল্প নিয়ে অতীতে নানা ধরনের চক্রান্ত হয়েছে। এই শিল্পকে রক্ষা করতে হবে। তেল সেক্টরকে ফ্যাসিস্ট সরকার দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিল। এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বহাল তবিয়তে আছে। অবিলম্বে তাদের অপসারণ করতে হবে। সকল দুর্নীতির বিচার করতে হবে। পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

শফিউল আলম বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে এই আসনের শ্রমিকদের সমস্যা পূরণ অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। শ্রমিকদের নায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে একসাথে কাজ করবেন। শ্রমিকদের জন্য আবাসন চিকিৎসা ও রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যের শিক্ষা নিশ্চিত করবেন। শ্রমিকদের সুস্থ বিনোদনের জন্য পার্ক ও কমিউনিটি ক্লাব গঠন করবেন।

সভাপতির বক্তব্য এস এম লুৎফর রহমান বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে শ্রমিকরা সম্মুখ সারি থাকলেও তাদেরকে কখনো মূল্যায়ন করা হয় না। শ্রমিকদের রক্ত ঘামে দেশের অর্থনীতি চললেও শ্রমিকদের ঘরে দুবেলা ভাত থাকে না। মূলত দেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল সেক্টরের মানুষ থাকলেও শ্রমিকদের কোন প্রতিনিধি থাকে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আগামী সরকার যারা গঠন করবে তাদের অবশ্যই শ্রমিকদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধি রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আজকের সমাবেশ শুধু বন্দর, গার্মেন্টস, তেল ও পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকদের না। আমরা সকল শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শ্রমিকের ত্যাগ ও শাহাদাতের কথা। দয়া করে আপনারা শ্রমিকদের আত্মত্যাগ কে ভুলে যাবেন না। এখনো বহু শ্রমিক হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। বহু শহীদ পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। আপনারা এসব পরিবারকে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সুতরাং এখনো সময় আছে নিজেদের ব্যর্থতা মোচন করার। এই সমাবেশ থেকে আমরা সকল শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার, পতেঙ্গা থানা সভাপতি মুহা:মাইন উদ্দিন, ইপিজেড থানা সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের সভাপতি মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, বিপিসি তেল সেক্টর সভাপতি আবু নাঈম সুজন, হালিশহর থানা সভাপতি মুহাম্মদ ইউসুফ, সিএনজি সেক্টর উত্তরের সভাপতি বশির আহদ, সাংবাদিক মুহাম্মদ হোসাইনসহ স্থানীয় ও মহানগরী বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।