খুলনা ব্যুরো ও ফুলতলা উপজেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সাংবাদিক হলো জাতির চতুর্থ স্তম্ভ। যে দেশের গণমাধ্যম যত উন্নত সে দেশের সভ্যতা তত উন্নত। মানুষের রাজনৈতিক মত ভিন্ন থাকতে পারে কিন্তু দেশের স্বার্থ সবার আগে। হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করে সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তা না হলে ভুল তথ্যে দেশ গভীর সংকটে পড়তে পারে যা পতিত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে জাতি অবলোকন করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা দেশকে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সময়ের সাথে সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশ ও এ দেশের স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সাড়ে ৭ মাসে ইতোমধ্যে জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার কান্ড, সচিবালয়ে আগুন, সংখ্যালঘু ইস্যুসহ বিভিন্ন আন্দোলনের নামে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল। এ অবস্থায় দেশ ও দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে সাংবাদিকদের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সাংবাদিকদের উপর বিভিন্ন জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেনি। সংগ্রামের প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতার, আমার দেশের সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও আদালত চত্বরে রক্তাক্ত করা, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে কারাগারে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে পতিত সরকারের দোসররা। এখন সময় এসেছে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার। এ সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ভুল কাজের সমালোচনা ও ভালো কাজ সঠিকভাবে তুলে ধরারও আহ্বান জানান। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফুলতলা উপজেলা শাখার উদ্যোগে ফুলতলা সরকারি মহিলা কলেজ অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্যার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আজম হাদী, জেলা প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক শেখ সিরাজুল ইসলাম, বায়তুলমাল সম্পাদক হাফেজ আমিনুল ইসলাম।
উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খানের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খানজাহান আলী থানা আমীর সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, ফুলতলা উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, খানজাহান আলী থানা সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, ফুলতলা উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ আলাউদ্দিন, ড. মাওলানা আজিজুল হক, পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফুলতলা ইউনিয়ন আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলাম, জামিরা ইউনিয়ন আমীর শরিফুল ইসলাম, সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান, হাফেজ গাজী আল আমিন, মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
সিয়াম সাধনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, তাকওয়ার জন্য আসা রমযানের রোযা রাখার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে আরো বেশি আত্মসংযমী হতে হবে। গুনাহ মাফের এই মাসে আমাদের বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও সর্বদা তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দিনের বেলায় সিয়াম পালন ও রাতে কিয়ামের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হবে। মিথ্যাকে পরিহার করে সর্বদা সত্যকে ধারণ করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে জাতিসংঘ মহাসচিবের ইফতার ও বর্তমান সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ, দাতা গোষ্ঠী, উন্নয়ন সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে গড়তে এ সরকারের পাশে থেকে সহযোগিতা করতে চাইছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী একটি দেশ ও সে দেশের এবং আমাদের কিছু মিডিয়া দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় তাদের সত্য ও সঠিক লেখনির মাধ্যমে অপপ্রচারের জবাব দিয়ে বাইরের বিশ্বে আমাদের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতের বিভিন্ন সমাজ সংস্কার ও জনহিতকর কাজের বর্ণনা দিয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণ যদি আমাদের রাষ্ট্র গঠনের দায়িত্ব দেয় তাহলে আমরা শাসক হতে চাই না, সেবক হতে চাই। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। ইনসাফ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে দেশ চালাতে চাই। আমাদের আমীরে জামায়াত মানবিক নেতা ডা. শফিকুর রহমান ইতোমধ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
এ সময় সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি। নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিনিমাম সংস্কারের মাধ্যমে একটি ফ্রি ফেয়ার এবং ক্রেডিবল নির্বাচনের জন্য যতটা সময় সরকারের প্রয়োজন আমরা সরকারকে তা দিতে চাই। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন যাতে ক্ষমতাসীনদের প্রভাবমুক্ত করা যায় জামায়াতসহ আরো কয়েকটি দল সেজন্য এ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে চায়। জোটভুক্ত নির্বাচন প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক কিছু রাজনীতির মাঠে হতে পারে। বিভিন্ন জোটভুক্তভাবে হতে পারে আবার স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচন হতে পারে। ইসলামী সমমনা দলসহ আরো কয়েকটি দলের সাথে আমাদের কথা হচ্ছে জোটের ব্যাপারে। এর সঠিক উত্তর আরো পরে জানা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।