বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ইসলাম শ্রমজীবী মানুষদের এক অনন্য সম্মানে ভূষিত করেছে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) নিজে শ্রমিক ছিলেন এবং শ্রমিকদের সবচেয়ে আপনজন ছিলেন। তিনি বলেছেন, শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু। শ্রমিকদের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে তিনি তাদের মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আমাদের নবী কাঠুরির আঘাতে জর্জরিত শ্রমিকের হাতে চুমু খেয়েছেন। তিনি বলেছেন, শ্রমিকদের হাশর হবে তাঁর সাথে এবং শ্রমিকরা ৫০০ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসুল (সা.) এভাবে শ্রমিকদের সম্মানিত করেছেন। তিনি বলেন, আজকের শ্রমিকরা অবহেলিত নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। কোথাও কোথাও এখনো শ্রমিকদের পর জুলুম নির্যাতনের স্টিভ রোলার চলছে। শ্রমজীবী মানুষের একমাত্র মুক্তির পথ হচ্ছে ইসলামী শ্রমনীতি। এই নীতি বাস্তবায়ন ব্যতীত শ্রমিকদের মুক্তি অসম্ভব। দেশে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে হবে। একদল মানুষ ভোট আসলে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার উপমা তৈরি করে। ভোট শেষ হয়ে গেলে তারা ও তাদের উপমা উধাও হয়ে যায়। এরকম মওসুমী ব্যক্তিদের দ্বারা ইসলাম ও শ্রমিকদের খেদমত হতে পারে না। সুতরাং আগামী নির্বাচনে শ্রমিকদের সত্যিকারের ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা ব্যক্তিদের বিজয়ী করতে হবে। ভন্ড ও প্রতারকদের মিষ্টি কথায় ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধুলিস্যাৎ করার চক্রান্ত চলছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেনি। তারা এ রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন চেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী জুলাইয়ের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মাঠে কর্মসূচি পালন করছে। সারা দেশের মানুষ আমাদের কর্মসূচির সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছে। আমরা মনে করি গণমানুষের এই আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন না করে দেশে কোন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে না। একই সঙ্গে দেশ টেকসই গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে পারবে না। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) খুলনা মহানগরীর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে আড়ংঘাটা থানার দুই জন সুবিধা বঞ্চিত শ্রমিক পরিবারের মাঝে টিউবওয়েল ও ঘরের টিন ক্রয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
আড়ংঘাটা থানা সভাপতি শাহিনুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, জামায়াতে ইসলামী আড়ংঘাটা থানার সাবেক আমীর আশরাফ হোসেন, বর্তমান আমীর মনোয়ার আনসারী, রিয়াজুল ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ তুহিন, সাজ্জাদ হোসেন তপু, রেজাউল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মহানগরী আমীর বলেন, স্বাধীনতাত্তোত্র বাংলাদেশ যারা ৫৪ বছরেও দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারেনি। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। উল্টো দুর্নীতি লুটপাট করে দেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করেছে। ছাত্র জনতা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তাদেরকে লাল কার্ড দেখিয়ে বিদায় করেছে। আজকে কিছু মানুষকে দেখছি দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজের ভূমিকায়। আমরা তাদেরকে স্মরণ করে দিতে চাই এই দেশের ছাত্র-জনতা আর কোন চাঁদাবাজ দখলদার ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবে না। সুতরাং সময় থাকতে আপনারা নিজেদের সংশোধন করুন। ইতিবাচক রাজনীতির মাঠে ফিরে আসুন।
আজিজুল ইসলাম ফারাজী বলেন, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষরা আর কতকাল লুটপাট ও দুর্নীতির বোঝা বহন করবে। শ্রমিকের ঘামে অর্জিত সম্পদ একদল মানুষ দিনে দুপুরে বিদেশে পাচার করছে। শ্রমিকদের ঠকিয়ে, মজুরি কম দিয়ে তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। এ সকল অসৎ নেতৃত্ব থেকে মুক্তির জন্য শ্রমজীবী মানুষরা উন্মুখ হয়ে আছে। শ্রমিকরা এখন সৎ দক্ষ ও দেশপ্রেমিক মানুষের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা তুলে দিতে বদ্ধপরিকর। আগামী নির্বাচনে শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে খুলনা-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।