একক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সর্বোচ্চ গুমের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। হাসিনা আমলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের শতকরা ৩১ জন সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী যা মোট গুম হওয়া সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত গুম সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সাম্প্রতি গুমের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিও চিত্রের একটি অংশে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বিশ্লেষণে বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গুম হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপর ‍দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

গুম কমিশনের ওই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতি ১০১ জন গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির ৩৭ জন, ছাত্রশিবিরের ৩১ জন, জামায়াত ইসলামীর ২৫ জন নেতাকর্মী বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা গুমের শিকার হয়েছেন। গুমের শিকার হওয়া অন্যান্যদের মধ্যে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্বল্পসংখ্যক নেতাকর্মী রয়েছেন। এছাড়াও রাজনৈতিক বিবেচনায় গুমের শিকার হয়েছেন হেফাজত ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও তাবলীগ জামায়াতের সমর্থকেরা।

গত ৪ জুন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে কমিশনের ভাষ্য, ‘আমরা এমন ২৫৩ জনের তথ্য পেয়েছি, যারা এক দশকেরও বেশি সময়জুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করলেও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর মিল রয়েছে। এরা একে অপরকে চিনতেন না, অথচ তাদের অভিজ্ঞতার মিল কোনো পূর্বপরিকল্পিত যোগাযোগ ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে সত্য ও জবাবদিহিতার পথে একটি বড় বাধা হলো- গুম ইস্যুতে গড়ে ওঠা অস্বীকারের সংস্কৃতি।’

পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই গুমের সংগঠিত কাঠামোর অস্তিত্ব অস্বীকার করে এসেছে এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরও এই অস্বীকারের মানসিকতা ভাঙা কঠিনই থেকে গেছে, কারণ অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনো ক্ষমতার অবস্থানে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কমিশনের ভাষ্যে, প্রমাণ নষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সম্ভাব্য সাক্ষীদের ভয় দেখানো এবং ভয়ভীতির সংস্কৃতি তাদের তদন্তে বাধা সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী বোঝাপড়ায় গিয়েছিল, যেখানে উগ্রবাদের ভয়কে রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহতকরণ, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’

এ লক্ষ্যে তারা বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দলীয়করণ করে, এবং নির্যাতন ও গোপন আটককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয় বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।