মানবিক বাংলাদেশ গঠনে যার যার অবস্থানে থেকে ডাক্তারদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। সেইসাথে প্রতিদিন কুরআনের স্পর্শে থাকার কথাও বলেন তিনি। রমযানে যথা নিয়মে যাকাত আদায় করে দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করে তোলার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা যে নিয়মে যাকাত আদায় করি তাতে গরিব আর স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে না। দরিদ্রই থেকে যায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টু রোডে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম এনডিএফ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন এনডিএফের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এনডিএফের তত্ত্বাবধায়ক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ আবু তাহের। এর আগে রমাদান উলুল আলবাব হান্টের বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রমযান এসেছে কিন্তু কুরআনকে আমরা আত্মার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছি কি-না? যদি করি, তাহলে প্রতিদিন আামাকে কুরআনের সাথে থাকতে হবে। আমরা যদি বিশ্বাস করি এই কুরআন নিয়ে বাঁচবো। এই কুরআন বুকে নিয়ে বিদায় নেবো এবং এই কুরআন নিয়েই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবো। তাহলে দেখবো কুরআন ছাড়া আমাদের একটা শ্বাসও চলে না।

তিনি বলেন, রাসূলের দেওয়ার প্রেসক্রিপশন যদি তামাম জীবনে ফলো করি, তাহলে স্ত্রীর জন্য আমি আদর্শ স্বামী, মা বোনেরা স্বামীর জন্য আদর্শ স্ত্রী, সন্তানের জন্য আপনি আদর্শ পিতা কিংবা মাতা, মা বাবার জন্য আপনি আদর্শ সন্তান এবং শ্বশুড়-শাশুড়ির জন্য আদর্শ বধূ কিংবা জামাতা। কর্মস্থলে আপনি সহকর্মীর জন্য কল্যাণকামী আপনজন। সকল জায়গা থেকে যখন সাক্ষী আসবে আপনি সার্থক ঈমানদার সার্থক মানুষ এবং সার্থক রোজাদার।

সিলেটের এক ডাক্তারের উদাহরণ টেনে বলেন, সিলেটের একজন ডেন্টাল সার্জন ছিলেন। তিনি পাকস্থলীর অসুখে মারা যান। তার লাশ দেখে হাসপাতালের ডোম আর পরিচ্ছন্নকর্মীকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম। কান্নার কারণ হিসেবে জানালেন এই ভদ্রলোক তাদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার ৫টা বোনের লেখাপড়া এবং বিয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি সামনে থাকা চিকিৎসকদের ওই ডাক্তারের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান। সেইসাথে বৈধভাবে উপার্জনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন কুরআনের একটা অংশ তেলাওয়াত করুন। তাহলে আপনাদের ভেতরের মানুষটা প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে যাবে। আর বাহ্যিক মানুষটাও শক্তিশালী হয়েই যাবে।

তিনি কুরআনের সাথে সম্পর্ক গভীর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটু মনোযোগী হলে দশদিনে কুরআন খতম করা সম্ভব। এই পুঁজি ছেড়ে দিবেন না। এটা বড় মায়াবি পুঁজি। এই পুঁজি কিয়ামত পর্যন্ত সঙ্গ দিবে। সেদিন রোজা এবং কুরআন আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারবে। এজন্য নিজের জীবনের কাজকর্মের সাথে কুরআনের নির্দেশিকা অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি।

রোজার মাসে যাকাতের উপকারিতার কথা উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কাপড় কিনে দিয়ে কোন লাভ নেই। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনকে স্বাবলম্বী করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যাকাত দিয়ে গরিবকে গরিব রাখার ফন্দি করা হয়। যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করার কথাও বলেন তিনি। গবেষণায় দেখা গেছে যথা নিয়মে যাকাত আদায় এবং প্রদান করা হলে ৬ থেকে ৭ বছল লাগবে সবাইকে স্বাবলম্বী করতে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কিছু লোক অনেক সম্পত্তির মালিক আর কিছু মানুষ অনেক অনেক গরিব হয়ে যাচ্ছে। আার মাঝখানের মানুষ পড়ছে বিপদে।

তিনি মানবিক বাংলাদেশ গঠনে যার যার অবস্থানে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা সবাই এগিয়ে যাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, রোজা রাখতে হবে ঈমান এবং ইহতেসাবের সাথে। তিনি প্রতিদিন কুরআনের সাথে সম্পর্ক রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই রোজা এবং নামায মানুষের অন্তরকে পরিবর্তন করে। ভাল মানুষে পরিণত করে।