ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন। শ্রমিকবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। বর্তমানে দেশে ইসলামকে ক্ষমতায় আনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে- সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চজ ( Proportional Representation ) পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।

গতকাল শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বিশাল শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সুষ্ঠু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই চজ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হতে হবে। বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠতাভিত্তিক ( First Past The Post ) নির্বাচনী পদ্ধতিতে জনগণের প্রকৃত মতামত সংসদে প্রতিফলিত হয় না। এর ফলে জাতীয় রাজনীতিতে বৈষম্য, অস্থিরতা ও অন্যায় প্রভাব বিস্তার পায়। শ্রমিকরাও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, আর মালিকরা আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়।

চরমোনাই পীর আরো বলেন, জনগণের ভোটের অনুপাতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসন বণ্টনই গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতি। এতে ভোটের মূল্য সংরক্ষিত থাকবে, ছোট ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবে এবং জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

এসময় তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই চজ পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এখন সময় এসেছে এই দাবিকে জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্মে রূপ দেওয়ার। নির্বাচনী সংস্কারের অংশ হিসেবে অবিলম্বে চজ পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক, প্রতিনিধিত্বশীল, শান্তিপূর্ণ ও শ্রমিকবান্ধব রাজনৈতিক সংস্কৃতি চাই। সেই পথের একমাত্র সমাধান হলো চজ ভিত্তিক নির্বাচন।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই)। তিনি বলেন, ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া কখনোই শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায় যেখানে মানুষ ও কুকুর খাদ্যের জন্য লড়াই করবে না, মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব থাকবে না, সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল কে এম বিল্লাল হোসাইন, যুগ্ম সেক্রেটারি জেনারেল এইচ এম রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ।

ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল: জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, গণহত্যার বিচার, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা,ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার ও বিচারকালীন নিষিদ্ধকরণের দাবীতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের ২য় দফার কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় বৃষ্টির জন্য আছরের পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, দেশের এতোগুলো রাজনৈতিক সংগঠন ধারাবাহিকভাবে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু আজ অবধি সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অথচ আমাদের দাবির যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট। যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করে, যারা সেই হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছে তাদের বিচারের মতো মৌলিক দাবী নিয়ে আমরা রাজপথে আন্দোলন করছি।

জুলাইয়ের রক্তের চাহিদা ছিলো দেশ থেকে স্বৈরতন্ত্রকে চিরস্থায়ী বিলোপের ব্যবস্থা করা। জনতার সেই চাওয়া পূরণের জন্যই আমরা পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব করছি যাতে কোনদিনই দেশে স্বৈরতন্ত্র ফিরে না আসতে পারে। এসব দাবীর প্রতি সরকারের উদাসীনতা গ্রহণযোগ্য না।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন দলের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ এবং প্রধান বক্তা ছিলেন মাওলানা ইমতেয়াজ আলম। প্রেসবিজ্ঞপ্তি