বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অন্তঃবর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, প্রথমে ফ্যাসিস্টদের বিচার, এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তারপরে জাতীয় নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন।

আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারিত) সকালে জামায়াতে ইসলামী রাজবাড়ী জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত কর্মী সন্মেলন'২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আবু সাঈদ, মুগ্ধ সহ আরো শত শত নাম না জানা শহীদেরা বুক ফুলিয়ে গুলির সামনে জীবন দিয়ে আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে, যে আন্দোলনে আহত হয়েছে ৩০ হাজারেরও অধিক, যাদের অনেকে এখনো হাসপাতাল অথবা বাসার বিছানায় ছটফট করে জীবন কাটাচ্ছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই দেশকে স্বপ্নের দেশে, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এভাবে আমরা তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারি। একটা সময় দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা ছিল তারা সবাই পালিয়ে গেছে। কারা পালায়? চোর, ডাকাত, ধর্ষণকারী, লুটপাটকারি। তারা পালিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছে তারা জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তারা বিশ্বাসঘাতক।

রাজবাড়ী

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল বলেন, গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলো সংস্কার করে নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করা এই মুহূর্তে জরুরী, তবে সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়। প্রথমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন তারপর জাতীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের পক্ষ থেকে বারবার কর করা হচ্ছে অথচ কাঙ্খিত সেই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলমান রয়েছে এবং এই সরকারকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আধিপত্যবাদের কোলে বসে পালিয়ে যাওয়া পতিত স্বৈরাচার ওখানে ষড়যন্ত্র করে অস্থিরতা তৈরি করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার সকল চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুঃখের সাথে এটাও লক্ষ্য করছি আমরা যারা একসাথে জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে, জেল জুলুম খেটে একসাথে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি তারাও এখন ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলছে, কেন এই বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে এবং কাদের স্বার্থে? এখন এটা ভেবে দেখার সময় এসেছে।

তিনি বলেন, মানুষের তৈরি করা আইনে ইনসাফ বা জাস্টিস প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য জাস্টিস প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর দেয়া আইনের কোন বিকল্প নাই আল্লাহর দেয়া আইনকে প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে।

হামিদুর রহমান আযাদ

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আজাদ (সাবেক এম পি)। তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার গত সাড়ে ১৬ বছর অঘোষিতভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল, সারাদেশে আমাদের সকল অফিসগুলো তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। নিবন্ধন বাতিল করেছে, আমাদের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। এরপরেও জামাতের অগ্রযাত্রা কে প্রতিহত করতে পারে নাই, কারণ জামায়াত একটি আদর্শবাদী দল। জামায়াত প্রতিদিন তার লক্ষ পানে এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তারা অপপ্রচার চালিয়েও জাতিকে বিভ্রান্ত করতে পারে নাই। এখন জাতি জামায়াতের মধ্যে আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে জামায়াতে ইসলামী ২৪ এর জুলাই বিপ্লবে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এখন জামায়াত জাতীয় গঠনের কাজে মননিবেশ করেছে।

সতের বছর পর জামায়াতে ইসলামী রাজবাড়ী জেলা শাখার কর্মী সন্মেলন গতকাল স্থানীয় শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা আমীর এ্যাডঃ নূরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারী মোঃ আলীমুজ্জামান এবং জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ফরিদপুর অঞ্চল সহকারী পরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন, কেন্দ্রীয় শূরা ও অঞ্চল টিম সদস্য শামসুল ইসলাম আল বরাটি, কেন্দ্রীয় শূরা ও অঞ্চল টিম সদস্য ফরিদপুর ১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর (অবঃ) আব্দুত তাওয়াব, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য, বাংলাদেশ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বি আর ই এল এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ আক্তারুজ্জামান, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য কুষ্টিয়া জেলা আমীর অধ্যাপক মোঃ আবুল হাশেম, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ফরিদপুর জেলা আমীর মোঃ বদরুদ্দীন, সাবেক ডীন রসায়ন বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফরিদপুর ৩ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর ড. ইলিয়াস আলী মোল্লা, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্ম পরিষদ সদস্য মোঃ জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক মোঃ সোহেল রানা মিঠু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু প্রতিনিধি অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র দাস, জেলা নায়েবে আমীর মোঃ হাসমত আলী হাওলাদার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মোঃ হারুন অর রশিদ, জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ হেলাল উদ্দিন, রাজবাড়ী পৌরসভা আমীর ডাঃ হাফিজুর রহমান, রাজবাড়ী সদর উপজেলা শাখা আমীর মাওলানা সাইয়েদ আহাম্মদ খান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডঃ রঞ্জু বিশ্বাস, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি মোঃ আবু তাহের সহ আরো অনেকে।

সম্মেলনে আগত কর্মীরা পাঁচ দফা দাবি সম্মিলিত প্লাকার্ড বহন করছিল, যা প্রধান অতিথি বক্তব্যেও উঠে এসেছে -- দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয, মেডিকেল কলেজ, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ চালু, পলিটেকনিক কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছিল এসব প্লাকার্ড। জেলার পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা থেকে হাজার হাজার দলীয় নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষ এ সম্মেলনে যোগ দেন। আশপাশের জেলা থেকেও উৎসাহি জনতা এই সম্মেলনে শরিক হয়।