স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকেই মহানগরের শিববাড়ি মোড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিপুল সংখ্যক সদস্যও এতে যোগ দেন। মুহূর্তেই পুরো এলাকা মিছিলের নগরীতে রূপ নেয়। শিববাড়ি মোড়ে জমায়েত হয়ে হাজারো মানুষ ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে একই দাবি তুলে ধরেন—“এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি চাই! জামায়াতের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দাও!
গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত গাজীপুর
সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন গাজীপুর মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন। এরপর একে একে বক্তারা সরকারের দমননীতির কঠোর সমালোচনা করেন এবং অবিলম্বে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মুহা. জামাল উদ্দীন। তিনি বলেন— আমাদের দাবী না মানা পর্যন্ত আমরা রাজ পথ ছেড়ে যাবনা।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন—
"গণতন্ত্র মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু আজ সেই স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। ইসলামপন্থীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। এটি এম আজহারুল ঢাকা মহানগের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও ভাপ্রাপ্ত সেকেটারি থাকাবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর ডিবি অফিসের ভিতরে পুলিশ অফাসার মেহেদী নির্মম নিয়াতন করে তার চেহারা বিকৃত করে দেয়। নির্যাতিত নিষ্পেষিত হয়ে তিনি কারাগারে জীবনযাপন করছেন।অথচ গত জুলাই বিপ্লবের পর অনেক হত্যা মামলার আসামীসহ অন্যন্য দলের অনেক নেতাকর্মীকে মুক্তি দেয়া হল। অথচ আমাদের দলের মজলুম জননেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তি হলোনা। আমরা দেখতে পারছি যে বৈষম্যের জন্যে বিপ্লব সংঘঠিত হল অথচ আমাদের বিরুদ্ধে আবার সেই বৈষম্য সৃষ্টি করা হল। আমরা সরকারকে বলতে চাই ১৫ বছর আমরা আন্দোলন করেছি।আমাদের আর রাজ পথে নামাবেন না।ছাত্রজনাতে সঙ্গে নিয়ে আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদাই করেছি।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে, জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে!" আমরা থেমে যাবনা, যতক্ষণ না আমাদের ন্যায্য অধিকার পুনরুদ্ধার না হয়।ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
গাজীপুর জেলা আমীর ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন-- অবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি ও আমাদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দাড়িপাল্লাহ প্রতিকে নির্বাচন করবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের দাবী না মানা হলে আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে।
শক্তিশালী বক্তব্যে উত্তাল জনসভা
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন:কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মুহাম্মদ আবুল হাশেম খান, গাজীপুর জেলা আমীর ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মুহাম্মদ খায়রুল হাসান,গাজীপুর জেলা নায়েবে আমীর মােওলানা সেফাউল হক,
মহানগর নায়েবে আমীর মুহাম্মদ হোসেন আলী,গাজীপুর মহানগর সহকারি সেক্রেটারি মুহাম্ম আফজাল হেসাইন,জেলা সহকারি সেক্রেটারি মুহাম্মদ আনিসুর রহমান বিশ্বাস, গাজীপুর মহানগ সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম মোল্লা, গাজীপুর জেলা সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি
মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদুল্লাহ,ছাত্র শিবিরের গাজীপুর মহানগর সভাপতি মিহাম্মদ রেজাউল ইসলাম,জেলা সভাপতি মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ভিপি ও ছাত্র শিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন প্রমুখ।
চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বিশাল মিছিল
সমাবেশ শেষে গাজীপুর মহানগরীজুড়ে এক বিশাল মিছিল বের হয়, যা চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে হাজারো মানুষ অংশ নেন, স্লোগানে প্রকম্পিত হয় নগরী।
বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
সমাবেশের সঞ্চালনায় ছিলেন গাজীপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ শফিউদ্দিন এবং মহানগর সেক্রেটারি আবু সাঈদ মুহাম্মদ ফারুক। বক্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে, তবে দাবি মানা না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।"
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়, তবে এতে উপস্থিত জনতার বিপুল সাড়া সরকারের জন্য স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেয়—এই আন্দোলন এত সহজে থামবে না!