বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি ও উপকূলীয় উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা যারা কুতুবদিয়া উপকূলের মানুষ আমরা জানি আমাদের জীবন কতটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাটে। দেশ স্থিতিশীল না থাকলে আমাদের উপকূলীয় এলাকার উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কুতুবদিয়া দ্বীপের অস্তিত্ব, জীবন-জীবিকা, জীব-বৈচিত্র্য ও প্রকৃতি হুমকিরমুখে; ফ্যাসিস্ট আমলে উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। কুতুবদিয়ার বেড়ি বাঁধ নির্মাণ দরকার। কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অবস্থা খারাপ। বাঁধ নির্মাণে যদি দুর্নীতি হয় তবে আপনি আমি প্রতিবাদ করবো। একটা উন্নয়ন কাজের সুফল সবাই ভোগ করে। দুর্নীতি বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
গতকাল রোববার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অস্তিত্বের সংকটে কুতুবদিয়া দ্বীপ ও রাষ্টের করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি এইসব কথা বলেন। সম্মিলিত নাগরিক সমাজের নেতা আকবর খানের পরিচালনায় গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. জয়নাল আবেদীন, কোষ্ট ট্রাস্টে নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক যুগ্মসচিব মনজুরুল আনোয়ার, প্রকৌশলী মনজুর সাদিক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাউজক প্রকৌশলী কায়ছার হামিদ, সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট আলমগীর কবির, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আযাদ, কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল আহমদ, কুতুবদিয়া উপজেলা জামায়াত আমীর আসম শাহরিয়ার চৌধুরী, মুজিবুল হক সিদ্দিকী বাচ্চু, শাহজাদা আব্দুল করিম প্রমুখ। এছাড়াও মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিউমারারী প্রফেসর ও সভাপতি উপকুলীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন। এছাড়াও আরো উপস্থিত থাকবেন রাজনীতিবিদ, সমাজ সেবক, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি।
সাবেক এমপি ও উপকূলীয় উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, দেশে একটি রক্তাক্ত পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। আমাদের আশা অনেক, ঐক্যমতের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে দেশের মানুষ এই প্রত্যাশা করে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশের একটা সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র চলে। সরকারের উপকূল নিয়ে সব পরিকল্পনায় কুতুবদিয়া ও মহেশখালী থাকতে হবে। মহেশখালী কুতুবদিয়া ফেরি দিতে হবে। ব্রিজ নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। সোনাদিয়া প্যারা বন তৈরি করা হয়, কিন্তু আমার নিজেরা পরিবেশ ধ্বংস করছি। নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে আমাদের দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। কুতুবদিয়ার মানুষ প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে। এখানে অর্থনৈতিক জোন হতে পারে।
গোলটেবিল আলোচনায় শঙ্কা প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, টেকসই বেড়ীবাঁধ এবং দ্বীপের চারপাশে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা না গেলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যেই সমুদ্রপৃষ্ঠে বিলীন হবে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড কুতুবদিয়া। বক্তারা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অব্যাহত ভাঙনে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কুতুবদিয়া দ্বীপ। শত শত পরিবার হারিয়েছে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, মাছের ঘের। এতে থেমে গেছে তাদের জীবিকার চাকা। এ সময়, সরকারের জরুরি উদ্যোগ ছাড়া দ্বীপবাসীর জীবন ও জীবিকা রক্ষা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। এজন্য সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিওন থেকে শুরু করে উচ্চপদ সব কর্মকর্তার চরিত্র, তারা বাঁধ নির্মাণ ও প্রকল্পের নামে লুটপাট ছাড়া কিছু বুঝে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড হলো জলহস্তী। কুতুবদিয়া সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে নিচু হয়ে যাচ্ছে। লবনাক্ত পানিতে ডুবে যায়।
প্রবন্ধকার ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন বলেন, অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে কুতুবদিয়া দ্বীপ বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে হবে। কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী বর্তমানে ভয়াবহ ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঢাকা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. জয়নাল আবেদীন বলেন, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী বর্তমানে ভয়াবহ ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এসব এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ জরুরি ভিত্তিতে শুরু না হলে, জীবিকা, জনবসতি ও সরকারি মেগা প্রকল্পগুলো মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
কোষ্ট ট্রাস্টে নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এক সময় ১২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ কুতুবদিয়া বর্তমানে ভাঙনে ক্ষয় হয়ে মাত্র ৬২ বর্গকিলোমিটারে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রতিবছর ভেঙে পড়া বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রবেশ করে কৃষি জমি, লবণের মাঠ ও জনপদে বিশাল ক্ষতি করে চলেছে। কুতুবদিয়ার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এর চারপাশে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।
সাবেক যুগ্মসচিব মনজুরুল আনোয়ার বলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাট এলাকার অবস্থাও অত্যন্ত সংকটাপন্ন। মাতারবাড়ি হচ্ছে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের সম্ভাব্য কেন্দ্র, যেখানে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু, নয়াপাড়া থেকে ধলঘাটের সাইটপাড়া পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে পড়ে মেগা প্রকল্পের জমি ও স্থানীয় জনপদ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এছাড়া মহেশখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব অংশে ভাঙন এমন রূপ নিয়েছে যে বর্ষা মৌসুমে লোকালয় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।