রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে একটি রূপরেখা তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রূপরেখায় রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়েছে দলটি।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের কাছে রূপরেখাটি হস্তান্তর করেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের আক্তার হোসেন বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার বলতে নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার নয় বা দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়গুলোকে মনে করি না। বরং ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণ- এ তিন বিষয়কে অর্জন হচ্ছে মৌলিক সংস্কারের মূল ভিত্তি।

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবিধানিক ও রাষ্ট্র-কাঠামোকে কীভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী উপাদানগুলো থেকে মুক্ত করতে পারি, সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণের বাইরে এসে কীভাবে জাতীয় স্বার্থকে প্রতিফলিত করতে পারি, কীভাবে বিচারবিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে হাজির করা যায়, প্রত্যেকটা বিষয়কে মৌলিক সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত বলে আমরা মনে করি।’

এনসিপির মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ১৫ মের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করার চেষ্টা করছি। তারপর দলগুলোর সাথে দ্রুত দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করতে চায় কমিশন।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অগ্রসর হচ্ছি। তার মধ্য দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে। যার লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথরেখা তৈরি করা। সেই প্রক্রিয়া আপনাদের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখাগুলো অবশ্যই সহায়তা করবে।

এ সময় এনসিপি'র পক্ষ থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, বিকেন্দ্রীকরণÑ এই তিনটি বিষয়ে মৌলিক সংস্কারের একটি রূপরেখা হস্তান্তর করা হয়। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে মৌলিক সংস্কারের যে রূপরেখা প্রদান করা হয়েছে তা আমরা গ্রহণ করলাম। পর্যালোচনা সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এই রূপরেখার একটি প্রতিফলন পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকসহ বিভিন্নভাবে কমিশনের আলোচনা অগ্রসর হচ্ছে। এই অব্যাহত আলোচনার মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা, যা গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা নির্দেশ করবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। অন্যদিকে, এনসিপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার ও জাবেদ রাসিন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল প্রথমবারের মত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে এনসিপি। সেদিন সংবিধান, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে কমিশনের দেওয়া সুপারিশমালা নিয়ে আলোচনা হয়।