স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ
রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শহীদ হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ তৌকির ইসলাম সাগর। দেশের আকাশ রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ এ তরুণ পাইলট নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন অনন্য সাহসিকতা ও দায়িত্ববোধের এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নিহত পাইলটের শ্বশুর, রানী বিলাসপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হোসেনের বাসভবনে গিয়ে পরিবারকে সান্ত্বনা জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, “এই পরিবারের শোক আমাদেরও শোক। শহীদ তৌকিরের আত্মত্যাগ যেন এ জাতিকে দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা এই পরিবারকে একা চলতে দেব না।”
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন জামায়াত নেতারা। তাঁদের এই উপস্থিতি শুধু সমবেদনার নিদর্শন নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ। উপস্থিত সকলেই শহীদ পাইলটসহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
এই সফরে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মোঃ খাইরুল হাসান ও মোঃ হোসেন আলী, মহানগর অফিস সেক্রেটারি আবু সিনা মামুন, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা আমির সালাউদ্দিন আইয়ুবী, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট সাদেকুজ্জামান খান, পুবাইল থানা আমির আশরাফ আলী কাজল, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের আমির মনির হোসেন খন্দকার, নায়েবে আমির মোঃ শামসুজ্জামান শিকদার, সেক্রেটারি শাহানুর হোসেন সাঈদ, মোশাররফ হোসেন মাস্টার, মো. সেলিম, আজহারুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
পাইলট তৌকির ইসলামের শ্বশুর আবুল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “আমার ছোট মেয়ে নিঝুমের সঙ্গে তৌকিরের বিয়ে হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। মাত্র পাঁচ মাস হলো হাতে তুলে দিয়েছি। এখন সে বিধবা। নিঝুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতকোত্তর করে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছিল। আজ সে মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা ছাড়া উপায় নেই।”
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার দিন তাদের প্রথমে জানানো হয় তৌকির নিখোঁজ। ঢাকায় ছুটে গিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তাকে। হাসপাতালের বেডে নিথর পড়ে থাকা ছেলেটিকে দেখেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। ঘটনার দিন কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা যায়, আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তৌকির বার্তা দেন—বিমানটি নিচে নেমে যাচ্ছে, উপরে উঠানো যাচ্ছে না। তাকে প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপ দিতে বলা হলেও, নিচে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দেখে বিমানটি খোলা মাঠের দিকে চালানোর চেষ্টা করেন তিনি। শেষ মুহূর্তে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি—দেশকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে বিসর্জন দেন।
এই অশ্রুসিক্ত মানবিক অধ্যায়টি কেবল একটি দুর্ঘটনার বর্ণনা নয়, বরং এক শহীদের আত্মত্যাগ, এক পরিবারের অপূরণীয় বেদনা এবং একটি রাজনৈতিক দলের মানবিক সংবেদনশীলতার সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।