নাটোর শহরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ আনন্দ শোভাযাত্রা ও তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণকালে জেলা নেতা-কর্মীদের উপর দলটির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস দুলুর অনুসারি ‘দুলু বাহিনী’র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ঘটনাটির প্রতিবাদে নাটোর জেলা বিএনপির সাইবার দলের এক প্রতিনিধি দল আজ সংবাদ সম্মেলন করে নিন্দা জানায় । গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার হামলার ঘটনা ঘটে।
লিখিত বক্তবে নাটোর জেলা সাইবার দলের সাধারণ সম্পাদক গুলমেরাজ হ্যামলেট বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নাটোর শহরে আমরা একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করি। এই শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের ঘোষিত রাষ্ট্র পূর্নগঠনের ৩১ দফা কর্মসূচি জনগণের সামনে উপস্থাপন করা এবং সাংগঠনিকভাবে জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি একদল সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়। সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস দুলুর নেতৃত্বাধীন সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ক'মসূচির ওপর বর¦রোচিত হামলা চালায়। মোটরসাইকেলে বহন করা ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী হঠাৎ মিছিলে ঢুকে নির্বিচারে মারধর, ভাঙচুর ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই হামলায় আমি সহ জাতীয়তাবাদী সাইবার দল ও ছাত্রদলের অন্তত ৭ জন নেতা-কর্মী আহত হন। আহতরা হলেন, আমি নাটোর জেলা সাইবার দলের সাধারণ সম্পাদক গুলমেরাজ হ্যামলেট, এনএস কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর হাবীব, ছাত্রদল নেতা কাউসার আলী, ছাত্রনেতা সাকিব, রিয়াদসহ আরও কয়েকজন। তিনি আরো বলেন,আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই-এই হামলা শুধু আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ নয়, এটি আসলে তারে রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র।ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা ক'মসূচি হলো- সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, অর্থনীতিকে জনমুখী করা, তরুণ সমাজকে নেতৃত্বে যুক্ত করা। মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, এবং সবচেয়ে বড় কথা -বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, উন্নত ও অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, নাটোরে দীর্ঘদিন ধরে চলমান একক আধিপত্যের রাজনীতি এই ক'মসূচিকে মানুষের কাছে গৌখাতে বাধা সৃষ্টি করছে। সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদুন মুলু প্রকাশ্যে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে ফ্যাসিস্ট রেজিমের সাথে গোপন আঁতাত করে নিজেকে ক্যান্সার রোগী সাজিয়ে ঢাকা আদালত প্রাঙ্গনে বলেছিল সে ক্যান্সার রোগী ডাক্তার বলেছেন তিন থেকে চার বছর বাঁচবে। তখন থেকে আমরা নাটোরবাসী বিএনপিতে বিকল্প দেতৃত্ব তৈরীর কাজ করে যাচ্ছি। তার ফলশ্রæতিতে কাশেম ভাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নাটোর জেলা বিএনপির হাল ধরেছিলেন। সেই থেকে ভিন্নমত ও যোগ্য নেতৃত্ব বেয়ে না উঠে সেজন্যে ভিন্নমতালম্বিদের দমন নিপীড়ন করে আসছেন। বিতর্কিত বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরের প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে তার বাইরে অন্য কারো নামে পোস্টার বা ব্যানার টাওয়না যাবে না। তার এই যোষণার পরই আবুল ক্যাশম সাহেবের প্রচারণার পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়।
আমরা এখানে স্পষ্ট করতে চাই- মোঃ আবুল কাশেম সাহেব কেবল জেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটির একজন সক্রিয় সদস্যই নন, তিনি আমরা বিএনপি পরিবার-এর উপদেষ্টা হিসেবে দীঘদিন ধরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সবসময় দলকে কেন্দ্র করে ঐক্যের ডাক দিয়ে আসছেন, বাক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এছাড়া, আমি গুলমেরাজ হ্যামলেট, নাটোর জেলা সাইবার দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করতে ভূমিকা পালন করে চলেছি। আমি বারবার বলেছি- বিএনপিতে এক ব্যক্তির বন্দনা নয়, বরং দলীয় চেতনা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। এ-ই কারণে তরুণ প্রজম্মের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এ-ই কারণে আজ আমাকে হামলার টার্গেট করা হয়েছে কেবলমাত্র সত্য কথা বলার কারণে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি- বিএনপি হলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া দল, যেটি মানুষের অধিকার, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে। এখানে কোনো বাক্তির আধিপত্য চাপিযে দেওয়া যায় না। নাটোরে বারবার যে সহিংসতা ঘটছে, তা মূলত একটি মহল গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিকে ধ্বংস করতে চাইছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই- বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, এখানে তারেক রহমানের ঘোষিত কর্মসূচিই একমাত্র পথনির্দেশক। এই দলে কাউকে ব্যক্তির পূজা করার সুযোগ নেই। নাটোরে দমননীতি ও হামলার মাধ্যমে যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা দলের ঐক্য ও জাতীয় আন্দোলন উভয়ের জন্যই হুমকিস্বরূপ।
আমাদের দাবি ১. ২৩তারিখের হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রæত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। ২. নাটোর জেলা বিএনপিতে ভিন্ন মত ও নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আসতে হবে। ৩ শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি বন্ধ করতে হবে। ৪. আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. বহিষ্কৃত নেতা, মাদক ব্যবসায়ারা কোন নেতার আশ্রয়ে বিএনপি করে, সেই নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবী জানাচ্ছি। আমরা শান্তি ও ঐক্য চাই। আমাদের লক্ষ্য-তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচির আলোকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলা। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আবুল কাশেম সাহেবের মতো ত্যাগী নেতা এবং আমাদের মতো ভরুণ প্রজন্মের সাহসী নেতৃত্ব ভবিষ্যতে বিএনপিকে শক্তিশালী করবে, গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে। কোনো সহিংসতা, দমনপীড়ন বা একক আধিপত্য আমাদের এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।