বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, রমযান মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধির মাস। একমাস রোযা রেখে তাকওয়ার মধ্য দিয়ে জীবন গঠনে আল্লাহকে ভয় করে সকল পাপাচার, ব্যভিচার, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ করে সুন্দর জীবন গঠন করতে পারলে ইহকাল ও পরকালে মুক্তি পেতে পারি। তিনি বলেন, একটি দল একটি পরিবার দেশের সকল মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের বাকশালী শাসন ব্যবস্থায় মানুষের সকল ধরনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কথা বললে খুন, গুম, নির্যাতন, হয়রানি আলেম-উলামাদের ফাঁসি দেওয়া ও জেলাখানায় পাঠিয়ে বাক স্বাধীরতা হরণ করা হয়েছিল। জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসার সকল স্বপ্ন বিলীন করে দিয়ে দুই হাজার ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট সরকার পালাতে বাধ্য হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) খুলনা জেলার ডুমুরিয়া সদর ও গুটুদিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ডুমুরিয়া শহিদ স্মৃতি মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
ডুমুরিয়া ইউনিয়ন আমীর আব্দুল গণি খানের সভাপতিত্বে ও মশিউর রহমান এবং ফরিদুজ্জামানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা ও আশরাফুল আলম, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হোসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি মাষ্টার আব্দুর রশীদ বিশ্বাস ও মাওলানা ফরহাদ আল মাহমুদ। এতে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতা মোল্লা আবুল কাশেম, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মো. নজরুল ইসলাম শামীম, ডুমুরিয়া উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মাওলানা সাইফুল্লাহ, সহকারী অফিস সম্পাদক মাওলানা শফিকুল ইসলাম, গুটুদিয়া আমীর মাওলানা আব্দুর রশিদ আল আজাদ, শোভনা ইউনিয়ন আমীর মো. মোসলেম উদ্দিন, ছাত্রশিবিরের আবু তাহের সরদার, গুটুদিয়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. ফরিদুজ্জামান, ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের সেক্রেটারি মো. মশিউর রহমান, যুব বিভাগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান গাজী, এডভোকেট আলমগীর কবির, জাহিদুল ইসলাম, নাজমুল হুসাইন প্রমুখ।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, রমযান হচ্ছে বদরের মাস, কদরের মাস। এই মাসে ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের শপথ নিতে হবে। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে। এ দেশে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের আর কোনও সুযোগ দেওয়া হবে না। দেশপ্রেমিক জনতাকে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে। সর্বোপরি সত্যিকারের মুক্তির জন্য কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের বিকল্প নেই। সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবেই ইনশাআল্লাহ।’ তিনি বলেন, মাহে রমযান হচ্ছে মানবতার মুক্তিসনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিলের মাস। এই মাসে নিজেদের পরিপূর্ণ মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। এই মাসে কুরআন-হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনার পাশাপাশি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করতে হবে। মাহে রমযানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে দেশে ইসলামি জাগরণ তৈরির সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই মাস শুধু ব্যক্তিগত নয় জাতিগতভাবে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে ইসলামের আলোকে গড়ে তোলার তাগিদ দেয়। একজন রাষ্ট্রপ্রধান, একজন এমপি, মন্ত্রীর মধ্যে যখন তাকওয়া জেগে উঠে-তখন আপনা আপনি তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন সহজ হয়ে উঠে। সেই সমাজে আল্লাহর ভয় এমনভাবে জেগে উঠে, যেখানে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান হেলিকপ্টার থেকে গুলী ছুড়ে শিশুকে হত্যার নির্দেশ দিতে পারে না। গুলী করে মানুষ মেরে লাশ আগুন দিয়ে ছাই করতে পারে না। তাকওয়া বা আখেরাতের ভয় গোটা রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেয়। জামায়াতে ইসলামী সেই তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গড়ার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তিনি এও বলেন, রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন জারি করতে মহাসংগ্রামের প্রয়োজন। জামায়াতে ইসলামী সেই মহা সংগ্রামের জন্য দেশবাসীকে ডাক দিয়েছে।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমাদের প্রথম বিশেষত্ব আমাদের শাসকরা সৎ হবে, দুর্নীতিবাজ হবে না, যা মুখে বলবে কাজে তাই করবে, লুটপাট করবে না, ইনসাফ করবে। একটা টাকা আত্মসাৎ করবে না, সুশাসন দিবে। যেটাকে গুড গভর্নেন্স বলা হয়, ট্রান্সপারেন্সি বলা হয়। যেটা কোন সরকার দিতে পারে নাই।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন চালু না থাকলে সুদ ঘুষ মদ জুয়া কিছুই বন্ধ করা যায় না। আল্লাহর আইন না থাকলে ব্যক্তিগত জীবনে তাকওয়া অর্জন করলেও সেটা কোন কাজে লাগে না। নিয়মিত তাহাজ্জুদ গুজারি হলেও সুদ ঘুষ থেকে বেঁচে থাকা যায় না। জামায়াতে ইসলামী তাই আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক সংগ্রামের ডাক দিয়েছে।