বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একসাথে চালাতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনা, তার দোসর ও অপরাধীদের বিচার করে তারপর নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে কোন নির্বাচন হয়নি, নির্বাচনের নামে বাংলাদেশের মানুষের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে আগে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার, খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী দোসরদেরকে সরাতে হবে; তা না হলে একটি ভাল নির্বাচন কিছুতেই করা সম্ভব হবে না। শেখ হাসিনা দেশকে ধ্বংস করেছেন। গত ৫ আগস্টে গণবিক্ষোভের মুখে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন তিনি ভারতের আশ্রয়ে থেকে যা খুশি তা বলে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে দেশের বিক্ষুব্ধ বিপ্লবী জনতা তার এই উস্কানির কারণে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। আমাদেরকে হাসিনার পাতানো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। শান্ত থেকে দেশ গঠনের কাজে মনোযোগ দিতে হবে। একসময় বিশ্বের কোথাও আমাদের মর্যাদা ও সম্মান ছিল না। কিন্তু ইসলাম আমাদের সম্মানিত করেছে, বীরের জাতিতে পরিণত করেছে। ইসলাম আমাদের শাসক জাতিতে পরিণত করেছে। ইসলাম আমাদের গৌরবান্বিত এবং মহিমান্বিত করেছে। তাই ইসলামের সৌন্দর্যই বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় নেত্রকোনার ঐতিহাসিক মোক্তার পাড়া মাঠে নেত্রকোনা জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নেত্রকোনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা ছাদেক আহমাদ হারিছের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাওলানা মাহবুবুর রহমান ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মাসুম মোস্তফার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই বিশাল কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক ড. ছামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, নেত্রকোনা জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা এনামুল হক, জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর নাজমুল হক সাঈদী, ঢাকা তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মুফতি আবু ইউছুফ খান, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেত্রকোনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুবীর চন্দ্র সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন ফকির, কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ রমজান আলী, জামালপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুস সাত্তার, শেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি আল হেলাল তালুকদার, নেত্রকোনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন সাইফুল, বিশিষ্ট ব্যাংকার ও সমাজ সেবক মোঃ হাবিবুর রহমান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মতিন, নেত্রকোনা উন্নয়ন ফোরাম ঢাকার সাধারণ সম্পাদক মোঃ এমদাদুল হক, জাতীয় নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠানসহ নেত্রকোনা জেলা ও উপজেলা জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, দুর্নীতিমুক্ত থাকতে হলে একটি আদর্শ থাকা দরকার। আর ইসলাম হচ্ছে সেই মহান আদর্শের নাম, যা লালন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আদর্শের পতাকাবাহী সংগঠন জামায়াতকে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল। তারা আদালতকে ব্যবহার করে, মিথ্যা প্রহসনের বিচার করে জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তারা আইনের তোয়াক্কা না করে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীকে চিরতরে শেষ করতে চেয়েছে। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের এই অন্যায়ের বিচার হতে হবে। জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি চেয়ে তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামকে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
কর্মী সম্মেলনে উপজেলাসমূহ থেকে জামায়াতের নেতা, কর্মী এবং সমাজের বিশিষ্ট জনদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে নেত্রকোনার ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলা সভাপতি মাওলানা খাইরুল বাশার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলা সভাপতি মাওলানা নূরুল ইসলাম হাকিমী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।