আজ ১লা সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যে দলের অনুসারীরা হবেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক ও বাহক। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত। তিনি নিজেও এসব গুণের অধিকারী ছিলেন। জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে শুরু হয় উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। রাজনীতিতে আসার আগেও এই মহান নেতার একটি ঘটনাবহুল জীবন রয়েছে। সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সব ক্ষেত্রেই তার একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। যা জাতি কোন দিন ভুলতে পারবে না।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে দেশ ও জাতি এক চরম হতাশায় নিমজ্জিত, দিশেহারা, চরম সংকটে পতিত হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে এ দেশের সিপাহী জনতা একই বছরের ৭ নবেম্বর জিয়াউর রহমানকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসায়। তিনিই প্রথম দেশে আওয়ামী লীগের গড়া একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

বিএনপি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের পাশাপাশি এনে দেন আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের। জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ পাঁচবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগ সন্ধিক্ষণে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী উপাধি পান। তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়। বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি আজ তাদের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে।

বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বিএনপির দাবি সেই সময়কার সেনা সমর্থিত সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাবে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে দল প্রায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতাদের দাবি, দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে।

বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছে, পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিসস্ট আ'লীগ সরকারও বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য গত দেড় দশক ধরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাই জিয়া ও খালেদা জিয়ার নামে নামকরণকৃত সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে তার ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে জোর করে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। এমনকি কথিত দুর্নীতি মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কথিত সেই মামলায় তিনি কারাবরণও করেছেন। বেগম জিয়ার দুই ছেলের বিরুদ্ধেও একের পর এক মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। বর্তমানে তারেক রহমানকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাকেও সাজা দেয়া হয়েছে। তবে গেল বছরের ছাত্র-জনতার গণ অভূত্থানে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে গেলে সব ক’টি মামলা থেকে খালাস পান বেগম জিয়া ও তারেক রহমান।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাণী : বিএনপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জাতীয়তাবাদী আদর্শের সাথে জনগণকে একত্রিত করার লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। দলটি বাংলাদেশী ভূখন্ডের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্থায়ী রুপ দেওয়ার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই তৎকালীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বাকশাল কায়েম করে স্বৈরশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে। শহীদ জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে পুনরায় বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করে জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। শহীদ জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি বিগত ৪৭ বছরে কয়েকবার সুষ্ঠুু নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।

তারেক রহমান আরও বলেন, এখনও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আইনের শাসন, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ, সংবাদ পত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এজন্য জনগণের নির্বাচিত জবাবদিহিমূলক সরকার অতীব জরুরী। গত দেড়যুগ ব্যাপী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে, যদি আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি। এটিই হোক বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে আমাদের অঙ্গীকার।

এদিকে দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাণী দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ও বহুদলীয় গণতন্ত্র দলের কেন্দ্রীয় আদর্শ। বিএনপি’র ১৯ দফা দলের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি জনগণ সার্বিকভাবে গ্রহণ করে।

কর্মসূচি : দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে গতকাল ৩১ আগস্ট বেলা ২টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ ১ সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া এদিন সারাদেশে সকল মহানগর ও জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে। ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বর্নাঢ্য র‌্যালী হবে নয়া পল্টনের সামনে থেকে। ৩ সেপ্টেম্বর দেশের সকল উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনা সভা ও র‌্যালী হবে। ৪ সেপ্টেম্বর সকল মহানগর, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপন, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ক্রীড়া অনুষ্ঠানে হবে এবং ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি গোল টেবিল আলোচনা হবে যার ভেন্যু ও সময় পরে জানানো হবে।