মো. খায়রুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) : অন্তবর্তী সরকার সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করায় ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এই আসনে আওয়ামী লীগ দৃশ্যত অনুপস্থিত থাকায় নির্বাচনী প্রতিযোগিতা মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ঘাটাইল আসনটি বিএনপি’র দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পতনের পর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে বেশ শক্ত অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীরা বিভক্ত হয়ে ধানের শীষ প্রতীক পেতে করছেন টানাহ্যাঁচড়া। বসে নেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ আসনে দলটির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার লড়বেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮০। যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৩ ও নারী ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮৫। এছাড়া ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
বিগত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে জানা যায়, আসনটিতে ১৯৭৩, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের শামসুর রহমান খান শাহজাহান, ১৯৭৯ সালে বিএনপি’র শওকত আলী ভূঁইয়া, ১৯৯১,১৯৯৬,২০০১ সালে বিএনপি’র লুৎফর রহমান খান আজাদ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ডাঃ মতিউর রহমান নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের আমানুর রহমান খান রানা ও ২০১৮ সালে তার পিতা আতাউর রহমান খান আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
সম্ভাব্য এসব প্রার্থী এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামি জলসা, খেলাধুলাসহ সব অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লা। থেমে নেই অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমের প্রচারও। তারা নিজেদের প্রার্থিতা পরিচয়ে ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। তবে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর গ্রুপিং ও আধিপত্য বিস্তারে সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভোটের মাঠে বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মোঃ হোসনী মোবারক বাবুল। তিনি নির্বাচনী মাঠেও বেশ সক্রিয়। সড়ক ও হাটবাজারে ফেস্টুন-ব্যানার এবং পোস্টার সাঁটিয়েছেন তিনি। আসনটিতে এবার জামায়াত চমক দেখাবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
এ আসনের প্রবীণ ভোটাররা বলছেন, বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান খান আজাদ মনোনয়ন পেলে অধ্যক্ষ মোঃ হোসনী মোবারক বাবুল এর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাছাড়া বিএনপির একসময়ের মিত্র জামায়াতের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিএনপির শক্তি বিশাল কর্মীবাহিনী। তবে ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি, মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, নিজ দলে গ্রুপিং ও দখলের অভিযোগ জনমনে দলটিকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
অন্যদিকে ভোটারদের কাছে ক্লিন ইমেজের একক প্রার্থী নিয়ে আধিপত্য দেখাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এনসিপি নতুন দল হিসেবে তরুণ ভোটারদের কিছুটা নজর কাড়লেও সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পায়নি বলে জানান তারা।
আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মূল আলোচনায় সাবেক সংসদ সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান খান (আজাদ)। বিগত ৩৭ বছরের ইতিহাসে লুৎফর রহমান খান আজাদ ছাড়া কাউকে এই আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থী হতে দেখা যায়নি। তিনি ১৯৯১,১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সর্বোচ্চ কাজ করেছেন। যার প্রতিদান হিসেবে ভোটাররা তাকে আবারও মূল্যায়িত করবেন তার বিশ্বাস।
এ আসনে বিএনপির অন্য প্রার্থীরা হলেন, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম ওবায়দুল হক নাসির, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পূর্ব ঘাটাইলের পাহাড়ি লাল মাটির কৃতী সন্তান মাইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান খলিলও নির্বাচনের লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মো. জাহিদুর রহমান দিপু সরকার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক মিয়া রাসেল।
এ ছাড়াও ঘাটাইল আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজাউল করিম, গণসংহতি আন্দোলনের মোফাখারুল ইসলাম, শিল্পপতি ও কেমি প্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তরুণ ছাত্রনেতা মো. শামীম মিয়া।
উপজেলা জামায়াতের আমির মোঃ রাসেল মিয়া বলেন, যদি জনপ্রিয়তা, সততা ও আদর্শের দিক দিয়ে বিচার করা হয় তাহলে এ আসনে অধ্যক্ষ মোঃ হোসনী মোবারক বাবুল এর বিকল্প নেই। জনগণ তাকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। জনগণ এবার দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবেন।