রাজনীতি
সেকেন্ড রিপাবলিক এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন প্রসঙ্গ
যে পাঁচ প্রশ্নের উত্তর দিলেন সামান্তা শারমিন
সামান্তা শারমিন। নতুন আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি দৈনিক সংগ্রামের ৫টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এবং সেকেন্ড রিপাবলিক ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতির বিশদ ব্যাখা দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইবরাহীম খলিল।
Printed Edition

সামান্তা শারমিন। নতুন আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি দৈনিক সংগ্রামের ৫টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এবং সেকেন্ড রিপাবলিক ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতির বিশদ ব্যাখা দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইবরাহীম খলিল।
প্রশ্ন : আপনারা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী কর্মসূচি কি আসছে ?
সামান্তা শারমিন : আমাদের দলতো আনুষ্ঠানিক গঠিত হলো। আমরা এখনো সাধারণ সভা করার সুযোগ পাইনি। সাধারণ সভা করে সবাইকে নিয়ে কর্মসূচির দিকে যাবো। অবশ্য কিছু কর্মসূচি মাথায় আছে। যেহেতু রোজার মাস চলছে। যাতে রমযানের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা হয় এমন কিছু কর্মসূচি আমরা হাতে নিবো।
প্রশ্ন : ২৮ তারিখ নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করলেন যে বাংলাদেশকে সেকেন্ড রিপাবলিক করতে চান। বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে, বিষয়টি আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছেন ?
সামান্তা শারমিন : বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা দুইভাবে আসছে। এক হচ্ছে কেউ এটা বুঝতে পারছেন, কিন্তু এটা চাচ্ছেন না। কেউ হয়তো এটা বুঝতে পারছেন না। তো যারা বুঝতে পেরেও চাচ্ছেন না, সেই অংশটাই বেশি। মানে যাদের মুখ থেকে বিভিন্ন ধরনের আলাপ আমরা শুনতে পারছি। সেটা হলো যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটা প্যারাডাইমশীপ ঘটলো। এই রাজনৈতিকভাবে পটপরিবর্তন, উত্তরণ এটাকে অস্বীকার করতে চান কেউ কেউ। অস্বীকার করলে লাভটা কি ? এখানে বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো। আর রাজনৈতিক কাঠামো যেখান থেকে আসে সেটা হচ্ছে সংবিধান। এই দুটো বিষয় যদি অপরিবর্তিত থাকে, রাজনৈতিক কাঠামো এবং সংবিধান সার্ভ করে একটি পার্টিকে। একদলীয় নিদেনপক্ষে একজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তাহলে এই দুটি বিষয় যদি অপরিবর্তীত থাকে তাহলে এরপর যে পার্টিই আসুক না কেন সে হচ্ছে এক ব্যক্তি এবং এক দলের যে সুযোগগুলো এনজয় করবে।
এজন্য এই কাঠামোটা পরিবর্তন না হউক সেটা বেশিরভাগ চাচ্ছে। যারা ক্ষমতার রাজনীতি করতে চায় তাদের চাওয়া। আমরা যেহেতু বলেছি যে অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটেছে। তাতে উত্তরণ ঘটেছে তাদের রাজনৈতিকভাবে। তাহলে পুরনো যে বন্দোবস্ত সেটা আর চলছে না। নতুন বন্দোবস্ত করার জন্য নতুনভাবে ভাবতে হবে। সংবিধানসহ সকল রাজনৈতিক কাঠামো ও যা অভ্যুত্থানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সেইসাথে যা গণবিরোধী এবং জনবিরোধী, সেই জায়গাগুলোতে পরিবর্তন করতে হবে এবং পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে, যেই পরিবর্তন করতে হবে বলে দেখা যাচ্ছে সেই পরিমাণ পরিবর্তন করলে দেশের জনগণের পক্ষ থেকে একটা নতুন ধারায় প্রবেশ করা হবে, মানে নতুন দিগন্তে প্রবেশ করা হবে। এ কারণেই সেটাকে আমরা বলছি সেকেন্ড রিপাবলিক। সেইসাথে যখন নতুন সংবিধান লেখা হবে তখন আরেকটা স্তর সামনে আসবে। রিপাবলিক দিয়ে যে কনট্রাডিকশন আছে (বৈপরিত্য আছে) অভ্যূত্থানকে পারফেক্ট বা সমুন্নত রাখা। অভ্যূত্থানকে ইনক্লুড করা। রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে এটাকে ইনকু¬ড করা।
প্রশ্ন : সেকেন্ড রিপালিকেশনের ঘোষণা তাহলে কি এই কারণে আসছে যে, ১৬ জুলাই একটি প্রোক্ল্যামেশন আসার কথা ছিল। সেটার পরিবর্তে এটা ?
সামান্তা শারমিন : প্রোক্ল্যামেশন বা ( ১৬ জুলাই ঘোষণা) হচ্ছে একটা পার্ট। প্রোক্ল্যামেশনের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের যে স্পিরিট সেটা লিপিবদ্ধ করা হতো। সেই স্পিরিটটাকে সংবিধানে ইনকু¬ড(সংযুক্ত) করার মাধ্যমে এখানে অভ্যূত্থান যে ঘটেছে সেটা দালিলিক স্বীকৃতির জায়গায় নিতে পারতাম। কিন্তু সেটা করা হয়নি। তাহলে এখন যেটা কাজ হচ্ছে, প্রোক্ল্যামেশনের জন্য ফাইট (লড়াই) করা। এজন্য কথা বলা। কারণ এটা সকল রাজনৈতিক দলের সেফটি এন্ড সিকিউরিটি ইস্যু। পরবর্তীতে এই অভ্যূত্থানকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করা হবে, সেটি এটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। এই অভ্যূত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যত ধরনের কার্যক্রম করা দরকার, সেটা করা হবে। কারণ ক্ষমতা আর অভ্যূত্থান মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যারা ক্ষমতা চাচ্ছে তারা অভ্যূত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আর যারা অভ্যূত্থানকে সমুন্নত করতে চাচ্ছে তারা ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে এখনকার বাংলাদেশের বাস্তবতা। তাহলে এখন যারা প্রোক্ল্যামেশন চাননি, একই ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতার জন্য তাড়াতাড়ি নির্বাচন চাচ্ছেন এবং সংস্কারের জন্য নির্বাচন চাচ্ছেন। আমরা যদিও জানি, এই নির্বাচনের জন্য এই পুরো কাঠামোটা কোনভাবেই মানসম্মত না। তারপরও নির্বাচন চাচ্ছেন জোরপূর্বক। তারপর আমরা এটাতো দেখছি যে, এই পক্ষই নানাভাবে রাজনৈতিক ধোঁয়াশা তৈরি করছে। আবার এই পক্ষই মধ্য থেকে এই সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এখান থেকে সুযোগ নেওয়ার নানান ধরনের কথা শুনছি। তাহলে একই পক্ষ থেকে এই ধরনের বক্তব্য যখন আমরা পাই তখন আমাদেরকে একটু সাবধান হতে হয়। ক্ষমতার রাজনীতিকে ভূলুন্ঠিত করে ক্ষমতার রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রশ্ন : কেউ কেউ বলছেন, আপনাদের রাজনীতিতে রাজনীতির ফিলোসোফিটা নাই। কি বলবেন ?
সামান্তা শারমিন : আমরা ফিলোসোপিক্যাল রাজনীতি করি না। এখানে আদর্শবাদী রাজনীতি দিয়ে বাংলাদেশের নানান পক্ষকে বার বার করে এক্সক্লুড করা হয়েছে, বঞ্চিত করা হয়েছে। বঞ্চিত যে জনগোষ্ঠী তাদেরকে দিয়ে তাদের মধ্যে দিয়ে আবার একটা বিভাজনের রাজনীতি করা হয়েছে। আমরা মনে করি এখানে আদর্শভিত্তিক রাজনীতির আর কোন ভবিষ্যৎ নেই। আমরা এখানে রাইটভেইসড পলিটিক্সের (অধিকারকেন্দ্রিক) কথা বলছি। অধিকারকেন্দ্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে আসলে দেশের সকল জনগোষ্ঠী সকলকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান করছি। এ কারণে আমরা একথা বলছি যে, দেশের বিদ্যমান রাজনীতিতে নানা রকমের বাস্তবতা আছে। নানা জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক টার্মওয়েল আছে। সেগুলো আমাদেরকে সাথে নিয়ে বসে সমন্বয় করতে হবে এবং এখানে যারা মধ্যমপন্থার দল হিসেবে দাবি করে বসে, আমরা দেখেছি যে তারা মধ্যমপন্থা এস ইন সবাইকে এক্সক্লুড করে বা এড়িয়ে গিয়ে মধ্যমপন্থা মানে কোন দিকেই যাবো না, এধরনের মধ্যমপন্থা। আমরা বরঞ্চ বলছি যে, সকল মত এবং সকলকে সাথে নিয়ে যদি মধ্যমপন্থা হয়, তাতে করে বাংলাদেশের বিভাজনের রাজনীতির যে ধারাটা আছে এট লাস্ট অবশেষে হয়তো ব্রেক করতে পারবো।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন নতুন সংবিধানের কথা বলা হচ্ছে সেটা আসলে কিভাবে ?
সামান্তা শারমিন : নতুন সংবিধানের জন্য প্রথমত ম্যান্ডেড হয়ে গেছে। এটার আর্টিকুলেশন হয়ে গেছে যে, নতুন সংবিধান লাগবে। ৩ আগস্ট ২০২৪ ইং নাহিদ ইসলাম সে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। বিদ্যমান সংবিধান আর কার্যকর নয়। এটা মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা আর প্রতিফলিত করতে পারবে না। ৩ আগস্ট সকল রাজনৈতিক দল এবং মত একত্রিত হয়ে গিয়েছিল। এখন কিছু পক্ষ এবং মত সেটা অস্বীকার করতে চাচ্ছে। নতুন সংবিধানের জন্য আমাদেরকে গণপরিষদ নির্বাচনে যেতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচনে যেহেতু সকল রাজনৈতিক মত যেহেতু অংশগহণ করতে পারবে, সেহেতু এখানে রাজনীতিকতার যে এক্সক্লোসন সেটা দাবি করার কোন সুযোগ নেই। সকল রাজনৈতিক দল এখানে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক উপায়ে নিশ্চিত করতে পারবে। সেইসাথে আমরা এক্সট্রা বেনিফিট পাবো যে, আমরা একটা নতুন সংবিধান পাবো এবং আমরা যেহেতু বলেছি যে, যারা এই নির্বাচনে জয়ী হবেন তারাই আইনসভায় রূপান্তরিত হয়ে যাবেন। তো বাংলাদেশের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং বাংলাদেশের যে স্বাভাবিক রাষ্ট্রিক কার্যক্রম কোনভাবেই ব্যাহত হবে না।