একযুগ পরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারী অধিকার কমিশন বাতিলসহ চারদফা দাবিতে মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার ভোর থেকেই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। গতকাল শনিবার ভোর রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মহাসমাবেশ সফল করতে দলে দলে সমাবেশস্থলে আসেন। এতে হেফাজতের সিনিয়র নেতারাসহ বিভিন্ন দলের নেতা ও বিশিষ্টি ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন। দুপুর ১টার পর এই মহাসমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠান শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই লোকে লোকারণ্য হয় পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। এতে করে হেফাজতের সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। অনেকে রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও টিএসসি, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েলচত্বর, পল্টন মোড়, কাকরাইল মোড়, মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ মোড়ে খণ্ড খণ্ড মিছিলসহ অবস্থান নেন। সমাবেশে যোগ দেওয়া দলটির নেতাকর্মীরা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘ইসলামের শত্রুরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যানার নিয়ে আসতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সকালেই কাণায় কাণায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মহাসমাবেশ সফল করতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সব জেলা, উপজেলা থেকে লাখো মানুষ অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকেই লক্ষাধিক নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন বলে জানান হেফাজতের নেতারা। হেফাজতের নেতারা দাবি জানিয়েছে, দুই মাসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে আরো কিছু দাবিতে দুইটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ২৩ মে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও পরবর্তী তিন মাস বিভিন্ন বিভাগে সম্মেলন। গতকাল শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান। হেফাজতের নেতারা জানিয়েছেন, মহাসমাবেশের মূল দাবি হলো হেফাজতের নেতাদের নামে থাকা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার। সংগঠনটির তথ্যমতে, সারাদেশে হেফাজতের নেতাদের নামে প্রায় ৩০০ মামলা রয়েছে। বাকি তিনটি দাবির মধ্যে রয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর গণহত্যা, ২০২১ সালের লংমার্চ এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের ‘গণহত্যাগুলোর’ বিচার দাবি, নারী অধিকার সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম নিপীড়ন বন্ধের দাবি।

টিএসসিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন হেফাজতের কর্মীরা: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে চলছে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামির মহাসমাবেশ। বাইরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন দলটির কর্মীরা। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা যাতে কেউ অপরিষ্কার না করে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখছেন তারা। টিএসসি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসময় দলে দলে হেফাজত সমর্থকদের সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন গেইট এবং টিএসসির রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন এলাকায় লাঠি হাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন কয়েকজন হেফাজতকর্মী। ফলে সমাবেশ থাকার পরও টিএসসি এলাকায় কোনও যানজট বা কোলাহল দেখা যায়নি। পাশাপাশি কেউ যাতে ক্যাম্পাস এলাকায় কোনও ময়লা-আবর্জনা না ফেলে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে।