বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণ ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন দেখতে চায়। গতকাল রোববার বিকেলে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ সুস্পষ্ট দিনক্ষন ঘোষণা দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি এর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমরা যারা এক সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। সুতরাং দেশে-বিদেশে সমন্বিত দক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবেচেয়ে অবাধ নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে। আজকে এনপিপির এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশা আমি রাখছি।

হঠাৎ করেই এনবিআর সংস্কার অর্থনীতির জন্য ভালো নয় মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, অন্তবর্তী সরকারকে নিয়মমাফিক বাজেট ঘোষণা করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, প্রতিটি বছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে মূল প্রতিবন্ধকতা। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআর হয়ত সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই্। তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মূখ্য। এমন বাস্তবতায় বাজেট পাসের ঠিক আগ মুহুর্তে অন্তবর্তী সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে.. এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্য্কর ভূমিকা রাখতে পারে বলে সকলেই বিশ্বাস করে এবং বিশেষ করে গণতন্ত্রকামী জনগণ।

তারেক রহমান বলেন, দেশে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত থাকলে সরকারের পক্ষে ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারন করা সহজ হয় না। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারি হয়ে ওঠে। এই কারণে হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে হলেও নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিকদের নিজেদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগন সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকারকে অবশ্য জনগণের ন্যায্য দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য।

অন্তবর্তী এই সরকার জবাবদিহিমূলক নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধ্যতার হয়ত সংকট নেই। তবে অবশ্যই এই সরকার জনগণের কাছে জব্বাদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহি মূলক নয় সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কেনো পরিকল্পনাই কার্য্কর ও টেকসই হয় না, হবেও না।

তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্যতা অযোগ্যতা বিষয় নয়, দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় একদিকে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অপর দিকে এক অনিশ্চিতকর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে একরমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। এ কারণে জনগণ প্রতিদিন আমরা দেখছি বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। যদিও আনফোরচুনেটলি তাদের এই দাবি-দাওয়া শোনার কেউ নেই এই মুহুর্তে।

স্বৈরাচারের মাথাচাড়ায় সর্তক থাকার আহবান রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি একটি বিষয় গণতন্ত্রকামী জনগণের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই, বাংলাদেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ধরণের অজুহাত কিংবা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পতিত পলাতক পরাজিত স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপেক্ষায় রয়েছে কিন্তু। এটি আজকে এখানে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যেও ফুটে উঠেছে। তবে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তাবেদার অপশক্তির পূনর্বাসনের পথরোধ করা সম্ভব। আমরা নিজ নিজ দলীয় আদর্শ এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়াগত বিরোধ দৃশ্যমান হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের স্বার্খে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় একতরফা ইস্যুতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বিগত ৫ অগাস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এসপিপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহদী আমিন, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।