ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ৮০টিরও বেশি সংগঠন নিয়ে তৈরি প্লাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’। দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে দেওয়া ভারতের বিবৃতির জবাব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট দাবি করেছে সংগঠনটি।

বুধবার (১৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ‘জুলাই ঐক্য’ এর সংগঠক প্লাবন তারিক এ প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ এবং নিজস্ব সংবিধানেই পরিচালিত হয়। কিন্তু আমরা দেখছি বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় গত ১৩ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ভারত। যা স্পষ্ট পররাষ্ট্র নীতির লঙ্ঘন। আমরা দেখেছি চব্বিশ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের বেশ কয়েকটি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে করে স্পষ্ট প্রমাণিত যে আওয়ামী লীগ ছিল ভারতের প্রক্সি।

ভারত সরকারের এরূপ আচরণ প্রমাণ করে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ছিল তাদের দাস। গত সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব ছিল হুমকিতে। জুলাইয়ে ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। ছাত্রজনতার এই বিজয়কে সহজেই মানতে পারছে না ভারত। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে শেখ হাসিনার তখন ভারত তাকে আশ্রয় দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

সন্ত্রাস বিরোধী আইনে গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে গত ১২ মে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন স্থগিত হয় দলটির। এটি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও ভারত এর বিরোধিতা করে উদ্বেগ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র নীতি ভঙ্গ করেছে। ২ হাজার ছাত্রজনতাকে হত্যার পর দেশ ছেলে পালায় শেখ হাসিনা। ভারতে বসে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নিয়ে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তা ধূলিসাৎ করে দিবে জুলাই ঐক্য।

আমরা স্পষ্ট ভাষায় ভারতকে সাবধান করে দিতে চাই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত এটি বাংলাদেশর অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ নিয়ে বিজিপি সরকারের বিবৃতি জুলাইয়ের ছাত্রজনতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ এ দেশের মানুষ ৫ আগস্ট থামিয়ে দিয়েছে। ভারত সরকারকে বুঝতে হবে আওয়ামী লীগের মতো বাংলাদেশের জন্য ভারতও অপ্রাসঙ্গিক।

ভারত রাষ্ট্র যে কখনোই বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপন না করে শুধু শেখ হাসিনা এবং তার অনুগত দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে সেটা ভেস্তে যাওয়ায় এখন তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের দেওয়া বিবৃতি এটাই স্পষ্ট করে যে ভারত সমমর্যাদা ও পারস্পরিক স্বার্থের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার সক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে।

৮০টিরও বেশি সংগঠন নিয়ে তৈরি প্লাটফর্ম জুলাই ঐক্য অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে আছে। জুলাই ঐক্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট দাবি করছে দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে দেওয়া ভারতের বিবৃতির জবাব দেওয়ার জন্য।

ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখে দেওয়ার জন্য জুলাইয়ের ছাত্রজনতা যেকোনো সময় প্রস্তুত। এ দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং মুজিববাদ আর কখনও ফিরবে না।”