বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক আমাদের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমাদের সাথে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক থাকলেও রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে সম্পর্কের টানাপোড়ন ছিল। একটা দেশের সাথে আরেকটা দেশের সম্পর্ক হবে সাম্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু বিগত সময়ে ভারত আমাদের উপর প্রভুত্বসুলভ আচরণ করে। সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি চুক্তি, সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারত সবসময় আমাদের সাথে নানা টালবাহানা করে আসছে। ভারত ও তার জনগণ আমাদের শত্রু নয় কিন্তু ভারতের শাসকদল ক্ষমতাসীন বিজেপি চরম সাম্প্রদায়িক একটা দল। জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতা যখন তাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিল তখন এদেশের ফ্যাসিস্ট ও স্যাডিস্ট শেখ হাসিনা তাদের উপর জুলুম নির্যাতন করে ২ হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও ৩০ হাজারের অধিক জনগণকে আহত করে। খুন, গুম, অর্থ পাচারসহ দুই শতাধিক মামলার আসামী স্যাডিস্ট শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ও রেড এ্যালার্ট জারি হয়েছে। অথচ এমন একজন অপরাধীকে আশ্রয় দেয়া কোন অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক দেশের কাছে কাম্য নয়। গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা ঈদগাহ ময়দানে থানা জামায়াতের কর্মী সম্মেলন-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আমীর মাওলানা মুনাওয়ার আনসারীর সভাপতিত্বে ও মু. রিয়াজুল ইসলাম এবং মাওলানা মাহদী আল-হাদীর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য যুব নেতা মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, দিঘলিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মুশফিকুর রহমান, দৌলতপুর থানা আমীর মাওলানা মুশাররফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানার সাবেক আমীর শেখ আশরাফ হোসেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের আড়ংঘাটা থানা সভাপতি অধ্যাপক শেখ শাহিনুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের সভাপতি মু. রায়হান, মাহবুব মিলন, হাফেজ সাহাব আদনান প্রমুখ। এ সময় খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খানজাহান আলী থানা সাবেক আমীর আজিজুর রহমান স্বপন, শ্রমিক নেতা এস এম মাহফুজুর রহমান, কাজী মাহফুজুর রহমান, জাফর সাদিক আনসারী, ফিরোজ আহমেদ তুহিন, হুসাইন আহমদ, রফিকুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন তপুসহ স্থানীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিগত ১৬ বছরকে জুলুম নির্যাতনের এক কালো অধ্যায় উল্লেখ করে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জামায়াত নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের বন্ধু। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘবে জামায়াত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ইসলামী রাষ্ট্রের যে ধারণা মহান রব কুরআনে উল্লেখ করেছেন জামায়াত সেই আলোকেই এই বাংলাদেশকে গড়তে চাই। জামায়াত শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গড়বে যা ২৪ এর আন্দোলনের ছাত্র-জনতা বুকে ধারণ করে জুলুম নির্যাতন সয়েছে তবুও পিছপা হয়নি। ছাত্ররা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে স্বপ্ন দেখছে জামায়াত তার সাথে একমত পোষণ করে। অতীতের জুলুম নির্যাতন দখলদারিত্ব মুক্ত বাংলাদেশ যদি নির্মাণ করা না যায় তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন বৃথা যাবে।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের সাবেক নেতৃবৃন্দের বিচার প্রসঙ্গে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নিজেদের বিচারক, সাজানো সাক্ষী দিয়ে আমাদের নিরপরাধ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে যা জনগণ মেনে নেয়নি। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামে ধর্ষণের মামলা দিয়ে জাতির সাথে উপহাস করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী বছরের জুনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় জামায়াতের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনটি স্তম্ভ- সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিকতা। জামায়াতে ইসলামী এই তিনটিকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ গড়বে। আমাদের আমীরে জামায়াত মানবিক নেতা ডা. শফিকুর রহমান এমন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং দেশের জনগণ যদি এই দায়িত্ব জামায়াতকে দেয়, তাহলে শোষকের ভূমিকাই নয় সেবকের ভূমিকা পালন করবে। জনগণ বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছে বাকি রয়েছে শুধু ইসলামী দলের শাসন দেখতে। আমরা আলেম-উলামা পীর মাশায়েখসহ ইসলামী সমমনা দলের সাথে আলোচনা চলমান। ফলে আপনারা আগামীতে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠালে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সে সরকার কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।
এর আগে শনিবার সকাল ৮টায় খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দামোদর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাইমারী স্কুল মাঠে ফুলতলার দামোদর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইউনিয়ন আমীর ইঞ্জি. শাব্বির আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম। দামোদর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্যা, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খান, নায়েবে আমীর মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা আজিজুল হক, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক মো. বোরহান উদ্দিন গাজী, প্রকাশনা সম্পাদক মো. হুসাইন আহমেদ, ফুলতলা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুর রহিম খান, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি শেখ আলাউদ্দিন, ফ ম আব্দুর রহমান, পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, আবুল হোসেন মোড়ল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরোজ মাহমুদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী মারুফুল কবির, সাবেক ছাত্রশিবির নেতা অধ্যাপক অহিদুজ্জামান, মুন্সী আব্দুস সামাদ, আব্দুল জলিল জমাদ্দার, মো. আজগর হোসেন, ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলাম, সেক্রেটারি হাফেজ গাজী আল আমিন, জামিরা ইউনিয়ন সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান, ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. হায়দার আলী ভুঁইয়া, সেক্রেটারি আব্দুস সবুর প্রমুখ।
ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের অর্থ তুলে ধরে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, রমযানের উদ্দেশ্য ছিল তাকওয়া অর্জন করা। যে বা যারা রোযার মাধ্যমে নৈতিক শক্তি তৈরি করতে পারে, বিবেকের শক্তিকে জাগ্রত করতে পারে আর পশুত্বকে কুরবানি করতে পারে তারাই তো সফলকাম হয়। তাকওয়া অর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে হবে, মৌলিক ইবাদতসমূহ পালন করতে হবে। তবে তাকওয়া নিয়ে চলার সবচেয়ে বড় বাধা হলো রাষ্ট্রে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম না থাকা। দেশের প্রচলিত আইনে কুরআনের বিধান না থাকায় আমরা পুরোপুরি ইসলাম মানতে পারছিনা। আমাদেরকে মুমিন হতে হবে। দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি হতে হবে ইসলামের আলোকে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি যদি ইসলামের আলোকে হয় তাহলে মানুষ সত্যিকার অর্থে শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে।
সেক্রেটারি জেনারেল তার ছাত্রজীবনের রাজনীতির শুরুর কথা বলতে গিয়ে বলেন, ৭৪ সালে প্রথম জাসদ ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি তার রাজনীতির জীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি কার্ল মার্কস ও লেলিনের বই পড়ার মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা পড়েন। সমাজতন্ত্র মানুষকে নাস্তিক্যবাদের দিকে আহ্বান জানায় যা একজন মুসলিম হিসেবে কাম্য নয়। পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যোগদান করেন। এ সময় তিনি বিএল কলেজের তৎকালীন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে ফুলতলা অঞ্চলের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে বিভিন্ন বাধার শিকার হন।
পরে সকাল ১০ টায় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর কলেজ মাঠে আটলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইউনিয়ন আমীর মাওলানা মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক ড. একরাম উদ্দীন সুমন, খুলনা জেলা সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ, মাওলানা ফরহাদ আল মাহমুদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল হালিম, শেখ মোসলেম উদ্দিন, আবুল হোসেন, হাফেজ আবু বকর সিদ্দিক, হাফেজ মঈন উদ্দীন, মাওলানা রুহুল আমীন, হাফেজ রবিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হুসাইন, অধ্যাপক হাফিজ মাহমুদ, নজরুল ইসলাম, আবদুল আজিজ, মাওলানা শহিদুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের ডুমুরিয়া উপজেলা সভাপতি শামিদুল হাসান লিমন প্রমুখ। রাতে দক্ষিণ শিরোমনিতে যুব বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।