জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন মির্জা আব্বাস। গতকাল বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নিজের এই সংশয়ের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি একটা কথা বলি, যেটা আমার নিজের কথা, এটা কিন্তু আমার দলের কথা না। ইংরেজীতে একটা কথা আছে ‘হোপ ফর দ্য বেস্ট, দিং ফর দ্য ওয়েস্ট, ভালো কিছু আশা করো, খারাপ কিছু চিন্তা করো। আমি ভালো কিছু আশা করি। খারাপটা ভাবি এভাবে, সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি উনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) করবেন না। আমি তার কোনো লক্ষণ দেখি না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন নিয়ে কেনো সংশয় তার ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ড. ইউনুস বলেছেন, ডিসেম্বরে না হোক জুনে হবে, এই কথাটাই আপনাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুন। এই যে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে সেজন্য নির্বাচন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমি ইউনুসকে বলতে চাই, এটার জন্য আপনি দায়-দায়িত্ব বহন করেন না। আপনি ভোট ডিসেম্বর বলার পরপরই অন্য একজন বলে দিলো জুনে, পরে এটা আপনি এনডোর্স করলেন। কিন্তু এই বিষয়টা আমি বেশ ভালো একটা সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট যুক্তি আছে যে, এই নির্বাচনটা যেন না হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, কয়েকটা দল যা শুরু করছে, এইটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো হতে থাকে তাহলে নির্বাচনটা কেমনে হবে। কেউ কেউ বলেই ফেলেছেন, আমরা নির্বাচনে যাবো না। আরে ভাই, কয়েকদিন আগে হলে আপনারা নির্বাচনে গেলেই কী না গেলেই কী? আপনাদের চিনতো ক্যাডা বাংলাদেশে? এখন আপনারা নির্বাচনে যাবেন না, ধমক দেন। কোনো লাভ নেই।
তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচনের সম্ভাবনা কম, এটি খারাপ কথা বললাম। আর ভালো কথা, আমি আশা করছি নির্বাচনটা হবে। এই যে দুইটা কথা বললাম সাংবাদিক বন্ধুরা কোনডা লেখবেন আপনারা। নির্বাচন হবে না লিখবেন না নির্বাচন হবে লিখবেন। ভাই লিখলে দুইটা ভালো করে লেইখেন। এটা কিন্তু উল্টা-পাল্টা কইরেন না। বুঝেন তো এমনিই লাইগা রইছে ব্লাগাররা আমার পেছনে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ব্লগার তারসহ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন সম্পর্কেও ‘আজে-বাজে’ কথা বলার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, আপনারা খেয়াল করে দেখেন, অন্য কোনো জুনিয়র নেতা সম্পর্কে কিন্তু কিছু ওরা বলতেছে না। শুধুমাত্র বিএনপির মধ্যে একটু মানুষজন লাইক করে, পছন্দ করে এদের বিরুদ্ধে লেখতেছে, কয়েকটা লোক। আমি মনে করি এই লোকগুলো দেশ এবং জাতির শত্রু।
জনগণকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে আব্বাস বলেন, আমাদের দেশটা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমাদের দেশের জাতির, জনগণের, দলের প্রত্যেকের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যদি বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করার যায় তাহলে এদেশে আবারও ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যেতে হবে। সুতরাং যে দলই হোক বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ যত দল আছে, মতবিরোধ থাকতেই পারে, আমাদের কিন্তু জাতীয় স্বার্থে দেশের স্বার্থে আমাদেরকে একটা কথা মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ডানে-বায়ে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, সুফিউর রহমান(প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) .. এই তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট, আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট আপনার ডানে-বায়ে আছে। আপনি (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস) দয়া করে এদের থেকে সাবধান থাইকেন। ওরা কিন্তু আপনাকে ডিরেল করে ফেলবে। আমি আবারও বলছি সচিবালয়ে চারজন সচিব আমি নাম বলব না। সচিবালয়ের বাইরে একজন সচিব মর্যাদায়, নাম বলছি না, উনি সচিব ছিলেন। এরা পাঁচ জন এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক কিন্তু সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না।
বিএনপির লোক প্রশাসনে বসে আছে, নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি(এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, বাচ্চাদের মতো কথা বলতেছেন। বাচ্চারা যেমন কথা বলে আমি খাবো, কেনো খাবো না, খাবো না। সেরকম উনারা বলছেন, আমি নির্বাচনে যাবো না। কেনো যাবো না.. প্রশাসনের বিএনপি বইসা রয়েছে। আরে ভাই, বিএনপি কোথাও নাই। এসব কথা বলবেন না। ১৬ বছর দেশের প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সচিবালয়ের ভেতরে এদেশের ফ্যাসিস্টদের দোসর, দেশের শত্রুগুলো বসে আছে, আওয়ামী লীগের দালালরা বসে আছে তাদের কেনো আপনারা বের করেন না? আমি যদি বলি তাদের কাছ থেকে আপনারা অবৈধ সুবিধা পাচ্ছে? ফ্যাসিস্টদের দোসর-আওয়ামী দোসর চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানান মির্জা আব্বাস।
ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে ঘোষণা দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ইদানিং একটি গ্রুপ খুব চালু করছে আপনারা যারা নাকি ফেসবুক দেখেন, কাজ করেন তাদেরকে বলছি এর প্রতিবাদ করবেন, তারা বলার চেষ্টা করছে কী জানেন? বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে। আরে ভাই কী কমু, ১৭টা বছর এদের(আওয়ামী লীগের) যন্ত্রণায় পাগল হয়ে গেছি। পরিবার-পরিজনসহ অশান্তিতে ভোগেছি, অসুস্থ হয়ে পড়েছি, অকালে বৃদ্ধ হয়ে গেছি, অনেক বিএনপি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে এই আওয়ামী লীগের অত্যাচারে। বরং আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে যারা দেশে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এদেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনাসহ তাদের সমস্ত নেতা-কর্মী, প্রশাসনের তাদের দোসরদের বিচার হতে হবে।
তিনি বলেন, একে অপরকে আমরা দালাল বানাচ্ছি এটা যেমন ঠিক না। আবার দালাল যে আছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। সুতরাং একে চিহ্নিত করে এদের হাত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন এক করা প্রসঙ্গে অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস বলেন, আমি একসময়ে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলাম, এটা গর্বের বিষয়। আমার মনে হয় আল্লাহর রহমতে খারাপ চালাইনি। এই ঢাকাকে দুই ভাগ করলো আওয়ামী লীগ। কাজটা কিন্তু ভালো করে নাই। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন যদি দুই ঢাকা যদি এক করে তাহলে প্রক্রিয়া আছে, শুধু এক করলে হবে না। এখন ঢাকা খুব বড় হয়েছে...এক করলেই হবে না। সুবিন্যস্ত একটা প্রশাসন তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, এই ঢাকা মহানগরীর অধিনে পুলিশ থাকবে, ওয়াসা থাকবে, তিতাস গ্যাস, ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অর্থাৎ ঢাকায় যা কিছু আছে এই গুলো সিটি গবর্নমেন্টের আন্ডারে থাকবে। এমন একটা সুপারিশ স্থানীয় সরকার কমিশন করেছে যা পত্রিকায় এসেছে দেখলাম সেজন্য আমি কিছুটা বললাম।
মশা নিধনের মেয়র হিসেবে কীটনাশক ওষুধ ও যন্ত্রপাতি আনার বিষয়টা তুলে ধরে অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র বলেন, এখন অনেকে জানে না, এখন যে দেখতেছেন, কামান দিয়ে মশা মারছে? এই কামান যদি ঢাকায় না থাকতো তাহলে কী হতো? আজকে বলি, এই মশা মারার কামান কিন্তু আমি এনেছিলাম ইম্পোর্ট করে? সিবা-গেইগী এবং রোল এ্যান্ড কোম্পানি থেকে, এর খবর কেউ জানতোও না।
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও গণতন্ত্র ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান টিপু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।