আজ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক এক বাংলাদেশি নাগরিক এবং গত ৩০ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আজ (৪ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার) এক যৌথ প্রতিবাদ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান এবং ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে সুবজ নামের (২৫) এক বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার ভোরে সীমান্তের ৮৬৪ ও ৮৬৫ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি জায়গায় তাকে গুলি করা হয়। এদিকে গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর সীমান্তে শহিদুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশিকে হত্যার পরের দিন (৩০ নভেম্বর) গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আন্তর্জাতিক পিলার ৭৬ ও ৭৭ নম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে ভারতের নিমতিতা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ইব্রাহিম রিংকু এবং মমিন মিয়া নামের দুই বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।”
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “গত এক দশকে বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গুলি ও নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশি হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে সীমান্তে বিএসএফের হাতে অন্তত ৩০৫ জন হত্যার শিকার এবং ২৮২ জন আহত হয়েছেন। শুধু চলতি বছরের ১১ মাসে অন্তত ৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের ধারাবাহিকভাবে বিনাবিচারে হত্যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধের শামিল। বাংলাদেশ সরকার, মানবাধিকার সংস্থা, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বারবার সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যা বন্ধের দাবি জানালেও ভারত সরকার কর্ণপাত করছে না।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয়দের এ ধরনের হত্যা ও নির্যাতন চরম অমানবিক এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অন্যায্য সীমান্ত শাসনের উদাহরণ, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। আমরা এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি সীমান্ত সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ, হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএসএফকে বিচারের মুখোমুখি করা এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নিয়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”