বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় নেত্রী শ্যামলী সুলতানা জেদনী পদত্যাগ করেছেন। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। জেদনী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের "সংগঠক" ছিলেন।
ফেসবুক পোস্টে জেদনী জানান, 'গত ৭/৮ মাস ছিলো আমার জীবনের অন্যতম অভিজ্ঞতার সময়কাল। পুরো সময়জুড়ে অনেক কিছু বুঝেছি , জেনেছি , শিখেছি। নানা রকম চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে মিশতে পারা এবং তাদের সাথে গল্প করতে পারা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম অধ্যায়।
জুলাই/অগাস্টের পর আর সবার মতো আমার মনেও নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার উদয় হয়েছে যার পুরোটা জুড়ে ছিলো দেশের মানুষের জন্য কিছু করা এবং গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন। কাজেই গণঅভ্যূত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে এর ভীতকে মজবুত করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি। যখন মনে হয়েছে , হাতে সময় কম তবে কাজ অনেক ; ঠিক তখনই সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে এই জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। চলমান সেমিস্টারেও বেশিরভাগ ক্লাস করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। তবে বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে। '
জেদনী জানান, 'গত ৬ মাসে বোধহয় ১২০ দিনও বাসায় থাকতে পারি নি, মায়ের হাতের রান্না খেতে পারি নি। কারণ দেশের নানা প্রান্তের মানুষকে পড়ার জন্য, বোঝার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি। আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন এখনও আসে নি।
কাজেই যখন রাত ২/৩ টায় বাসায় ফিরতাম , গলির মোড়ের দোকানদার থেকে শুরু করে অনেকে আড়চোখে তাকাতো। এইসব উপেক্ষা করে চলার দারুণ ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা অবশ্য আমাকে দিয়েছে। পড়াশোনা/ নিজের শখ / যত্ন বিসর্জন দেয়া বা কারো কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই কিংবা কোনো অনুশোচনা কাজ করছে না। তবে আজ খারাপ লাগছে এই ভেবে যে , গত ৬ মাস আমার মা-কে আমি ঠিকঠাক সময় দিতে পারি নি বরং বেশিরভাগ সময় উপেক্ষা করে গেছি।
আমার এইটুকু জার্নিতে আমার মা সবচেয়ে বেশি সাপোর্টিভ ছিলো , কি কি করেছে আমার জন্য সেগুলো বলা এখানে মূখ্য বিষয়ও নয় অবশ্য। সবকিছু বাদ দিয়ে এই জায়গাকে আপন করে নেয়ার ফলে যা কিছু হারিয়েছি, তা নিয়ে মা মাঝেমধ্যে বকা দিলেও আজ যখন আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ; ঠিক তখনই আমার মা'র চোখেও পানি দেখেছি!'
তিবি লেখেন, 'বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জন্য শুভকামনা রইলো। ৫৪ বছরের কুৎসিত ছাত্র রাজনীতির অবসান এই প্লাটফর্মের হাত ধরে হোক, এই প্রত্যাশা! আপনারা সুস্থ ছাত্র রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করুন , স্বজনপ্রীতির অবসান ঘটিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দিকে অগ্রসর হোন। যোগ্য নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া এবং মানুষকে মর্যাদা দেয়ার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠুন, মানুষের অধিকারের কথা বলুন।'