রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে কীটনাশক ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপি নেতার হত্যার হুমকির ভয়ে এক মাস যাবত তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা। এঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী রবিউল হাসান। তিনি বাঘার বাউসা ইউনিয়নের ভেড়ালীপাড়া গ্রামের আবু তাহের প্রামানিকের পুত্র।
গতকাল রোববার দুপুরে বাঘা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে, রবিউল হাসান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাউসা পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত অয়েজ উদ্দিনের ছেলে বাউসা ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ ও বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম তার প্রতিষ্ঠানে ‘ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট’ পদে চাকরি দেওয়ার নামে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেয়। এছাড়া চিকিৎসার জন্য ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকাসহ পর্যায়ক্রমে বিএনপি নেতা রেজাউল করিম ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়। এ টাকা ফেরত চাইলে উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করে।
দেশের পট পরিবর্তনের পর বাউসা বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ৭ লাখ টাকা দাবি করে। ভয়ে নগদ ২ লাখ টাকা স্থানীয় এক মেম্বরের মাধ্যমে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে ১ লাখসহ মোট ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। এছাড়া সময়ে অসময়ে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি। তার ভয়ে প্রায় এক মাস যাবত ব্যবসা প্রতিষ্টানে যেতে পারছি না। ২২ আগষ্ট দোকানে গিয়ে আবারও ৩ লাখ টাকা দাবি করে। এ টাকা না দিতে পারায় ১ সেপ্টেম্বর কাফনের কাপড় রেডি করে রাখর হুমকি দেয়। ২ সেপ্টেম্বর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে চাচাতো ভাই শামীম উদ্দীন ও পিতা আবু তাহেরকে মারধর করে। এ বিষয়ে ২ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী ও চারঘাট ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে বিএনপি নেতা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
রাজশাহীতে জুলাই আন্দোলনে
শহীদ দুই ছাত্র হত্যার বিচার শুরু
রাজশাহীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও যুবলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম রুবেলের বিচার শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ধার্য্য তারিখে তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য গ্রেপ্তারের পর ডাবলু সরকারকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বগুড়া কারাগারে এবং রুবেলকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয় বলে রাজশাহীর সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান নিশ্চিত করেন।
গত বছর জুলাই আন্দোলনে রাজশাহীতে দুই শিক্ষার্থী হত্যার মামলা দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর নিহত শিবির নেতা আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুবলীগ কর্মী রুবেলসহ মোট ২৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার গাজিউর রহমান জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ৯টির অভিযোগপত্র ইতোমধ্যে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যা মামলার অভিযোগপত্রও রয়েছে। আলী রায়হান হত্যা মামলায় ১২৭ জন এবং সাকিব আনজুম হত্যা মামলায় ১১৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে গ্রেপ্তার ডাবলু সরকার ও রুবেল রয়েছেন। এছাড়া তদন্তে পাওয়া ৩২ জন এবং এজাহারনামীয় আরও ২৮ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ডাবলু সরকার, রুবেল ও বাপ্পি চৌধুরী রনিসহ মোট ৫ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ আসে সম্প্রতি। তবে রনি জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছেন। সাবেক মেয়র লিটন ৫ আগস্টের পর থেকেই পলাতক আছেন। আর বাপ্পি রনি গ্রেপ্তারের পর জামিন নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে এ মামলায় কেবল ডাবলু সরকার ও রুবেলকেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আলী আশরাফ মাসুম জানিয়েছেন, আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, ডাবলু সরকার, রুবেল ও বাপ্পি চৌধুরী রনিকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ আসে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ডাবলু সরকার ও রুবেলকেই আদালতে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।